ছবি : সংগৃহীত

শাস্ত্রে প্রদীপের জ্যোতিকে শক্তিস্বরূপা বলা হয়েছে এবং প্রসন্নতা, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য, ধনসম্পদের প্রাচুর্য, শত্রুবুদ্ধিকে বিনাশসহ সব কল্যাণের আধার বলা হয়েছে।

তাই আদ্যাশক্তি মহামায়ার সন্তুষ্টির জন্য দীপাবলিতে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলিত করতে হয়। এই প্রদীপ প্রজ্বলনের মন্ত্রে বলা হয়েছে—

ত্বং জ্যোতিঃ শ্রী রবিশ্চন্দ্রো বিদ্যুৎসৌবর্ণতারকাঃ।

সর্বেষাং জ্যোতিষাং জ্যোতি-দীপজ্যোতিঃস্থিতে নমঃ।।

শুভং করোতি কল্যাণং আরোগ্যং ধনসম্পদা।

শত্রুবুদ্ধি বিনাশায় দীপ জ্যোতির্নমোঽস্তুতে।।

‘হে জ্যোতির্ময়ী, তুমি সূর্য, চন্দ্র, বিদ্যুৎ, সুবর্ণ এবং নক্ষত্রসহ সব জ্যোতির্ময় বস্তুর জ্যোতি। এই প্রদীপের জ্যোতিতেও তুমি বিরাজিতা, তোমায় প্রণাম।

আমি দীপজ্যোতিকে প্রণাম জানাই, যা প্রসন্নতা, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য, ধনসম্পদের প্রাচুর্য আনে এবং শত্রুবুদ্ধিকে বিনাশ করে।’

দীপাবলিতে প্রজ্বলিত মঙ্গল প্রদীপের আলো সূর্য, চন্দ্র, বিদ্যুৎ, সুবর্ণ এবং নক্ষত্রসহ সব জ্যোতির্ময় বস্তুর জ্যোতি স্বরূপা। এই পবিত্র দীপজ্যোতি প্রসন্নতা, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য, ধনসম্পদের প্রাচুর্যই শুধু বয়ে আনে না ; জীবনের সব ধরনের শত্রুবুদ্ধিকেও বিনাশ করে।

তাই কার্তিক মাসে দীপাবলির অমাবস্যা তিথিতে বেশি বেশি করে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে ঘর বাহির আলোকিত করে রাখতে হয়। কার্তিক মাসের অমাবস্যার তিথিতে দীপমালা, দীপচক্র ও দীপবৃক্ষাদি নির্মাণ করে আদ্যাশক্তি মহাদেবীর উদ্দেশ্যে পশুবলি, পূজা এবং হোম করা কর্তব্য।

সেই সময় যেহেতু দক্ষিণায়ন, তাই পূজার মাধ্যমে দেবতাদের জাগরিত করে দৈবশক্তির অভ্যুত্থান করতে হবে। দৈবশক্তির আশীর্বাদ নিয়ে মনুষ্য, অশ্ব, হস্তি প্রভৃতির নীরাজন করতে হবে। তবেই বিজয় সুনিশ্চিত।

নীরাজন হলো রাজাদের যুদ্ধযাত্রার পূর্বে যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রাদি পরিষ্কার করে অর্চনা করা। শাস্ত্রে বলা হয়েছে—

তুলাস্থে দীপদানেন পূজা কার্য্যা মহাত্মনা।

দীপবৃক্ষাঃ প্রকর্তব্যা দীপচক্রাস্তথাপরা।।

দীপযাত্রা প্রকর্তব্যা চতুর্দ্দশ্যাং কুহূষ চ।

সিনীবালীস্তথা বৎস তদা কার্য্যং মহাফলম্‌।

সর্বশেষে প্রকর্তব্যা বলিপূজাহোমোৎসবম্‌।

নৈরাজনং প্রকর্তব্য নৃনাগতুরগাদিষু।

কার্তিক্যাং কারয়েৎ পূজা যাগং দেবীপ্রিয়ং সদা।।

(দেবীপুরাণ : ৫৯.২৩-২৬)

‘কার্তিক মাসে দীপমালা দান করে পূজা করবে। ঐ মাসের চতুর্দশী এবং অমাবস্যার দিন দীপমালা, দীপচক্র ও দীপবৃক্ষাদি নির্মাণ করবে। ঐ দিবসে বলি-পূজা-হোম করা কর্তব্য।

দেবতাদের অভ্যুত্থান ও মনুষ্য, অশ্ব, হস্তি প্রভৃতির নীরাজন করবে (যুদ্ধযাত্রার পূর্বে অস্ত্রশস্ত্রাদি পরিষ্কারকরণ তথা অর্চনাকরণ)। কার্তিক মাসে দেবীর পূজা এবং দেবীর উদ্দেশ্য যজ্ঞ করবে। যজ্ঞ দেবীর অত্যন্ত প্রিয়।’

কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে কালীপূজার দিনে দেবীর পূজার বিবিধ প্রকারের উপচারের সাথে দুটি অবিচ্ছেদ্য উপচার রয়েছে। সেই দুটি উপচারের মধ্যে প্রথমত হলো, দেবীর উদ্দেশ্যে দীপমালা প্রদান।

অর্থাৎ অসংখ্য প্রজ্বলিত প্রদীপ মালার মতো সাজিয়ে দেবীকে সমর্পণ। দীপমালার সাথে আরেকটি বিষয় হলো অস্ত্রশস্ত্রের নীরাজন। এই নীরাজন হলো, কোনো যুদ্ধযাত্রার পূর্বে অস্ত্রশস্ত্রাদি পরিষ্কার করে অর্চনা করা। তাই বাৎসরিক কালীপূজায় দেবীর সাথে সাথে দেবীর দৈবশক্তির প্রতীক ‘খড়গ’ নামক অস্ত্রের পূজা বাধ্যতামূলক।

কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী ।। সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়