প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মেজাজ হারিয়েছেন সাকিব আল হাসান। যাকে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের তালিকায় ফেলেন অনেক বিশ্লেষক। অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও শাস্তি এড়াতে পারেননি তিনি। সাকিব নিজে অপরাধ স্বীকার করলেও ভক্তদের অনেকেই এটিকে বলছেন সাহসী সিদ্ধান্ত। এক ধাপ এগিয়ে কেউ কেউ বলছেন, সাকিবের লাথি স্ট্যাম্পে নয় বিসিবির অনিয়ম বরাবর। আবার সাকিবের বিরোধিতাও করছেন অনেকেই। দুই পক্ষই গরম করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

সাকিব অপরাধ করেছেন এবং আঘাত করেছেন ক্রিকেটীয় চেতনাতেই- নিঃসন্দেহে। কিন্তু কথা হচ্ছে সাকিবের মতো একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়- যিনি নিয়মিত খেলে বেড়ান দুনিয়া জুড়ে। ক্রিকেটের নিয়মকানুন যার অজানা নয়। তিনি কেন এমন অপেশাদার আচরণ করলেন? এটা কি সাকিবের স্বভাব সুলভ মাথা গরম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ? নাকি দীর্ঘদিন ধরে মনে জমা হওয়া ক্ষোভ তিনি সেদিন উগড়ে দিয়েছেন মাঠে?

যে ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলা হচ্ছে, অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে সেই ক্রিকেটীয় চেতনার কবর হয়েছে বহু আগেই। এখানে আম্পায়ার আঙুল উঁচান, হাত নাড়ান অদৃশ্য কোনো শক্তির ইশারায়। ক্রিকেটীয় জ্ঞান ব্যবহার করে ম্যাচের সিদ্ধান্ত দেন না তারা। দিতে পারেন না। কারণ সিন্ডিকেট।

কেউ কেউ বলছেন, সাকিবের লাথি স্ট্যাম্পে নয় বিসিবির অনিয়ম বরাবর। আবার সাকিবের বিরোধিতাও করছেন অনেকেই।

চলতি প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত একটি দলের মোট ২৯টি উইকেটের পতন হয়েছে- তার একটিও লেগ বিফোর উইকেট বা এলবিডব্লিও নয়। অনেকেই বলছেন এটি অস্বাভাবিক নয়। তবে আমরা যারা ক্রিকেট খুব বেশি বুঝি না তাদের কাছেও এটি অতি কল্পনীয় কাকতালীয় বলে মনে হয়।

ঢাকার মাঠে কান পাতলে এমন কথাও শোনা যায়- অমুক দলের বিপক্ষে খেলা? বোল্ড হও- আপত্তি নেই। কিন্তু পায়ে বল লাগিও না। তাহলেই আউট! আবার সেই অমুক দলটিই যখন ব্যাট করবে- তখন পারলে তাদের ব্যাটসম্যানদের পারলে ক্লিন বোল্ড করো। ক্যাচ আউটও করতে পারো। কিন্তু এলবিডব্লিও’র কথা চিন্তাই করো না।

এই যখন অবস্থা, তখন সাকিব মেজাজ হারালে, ক্রিকেটীয় চেতনা ভুলে অপেশাদার আচরণ করলে সেটির দায় অবশ্যই তার। কিন্তু দেশের ক্রিকেটের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বিসিবি কি সেই দায় এতটুকু এড়াতে পারে? সাকিব মাশরাফিসহ যে পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরে বাংলাদেশ নিয়মিত জিততে শিখেছিল- তাদের মধ্যে প্রধান কাণ্ডারি মাশরাফি জাতীয় দল ছেড়েছেন। বাকি চারজন খেলবেন হয়তো আর কয়েক বছর। এরপরের পাইপলাইনের কী অবস্থা? বিসিবির কাছে উত্তর আছে কি?

মিরপুর ক্রিকেট পাড়ায় গেলে এমন খবর তো ভাসে- দুয়েকজন মিডিওকার সাবেক খেলোয়াড় সিন্ডিকেটের বেড়াজাল গড়ে তুলে কখনো জাতীয় দলের ম্যানেজার, কখনো ঘরোয়া লিগের কোচ- সেটি হোক বিপিএল কিংবা প্রিমিয়ার লিগ। এই সিন্ডিকেটই ঠিক করে কোন খেলোয়াড় কোন দলে খেলবে, কোন দল লিগে পয়েন্ট টেবিলে কোথায় থাকবে ইত্যাদি, ইত্যাদি।

যে ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলা হচ্ছে, অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে সেই ক্রিকেটীয় চেতনার কবর হয়েছে বহু আগেই। এখানে আম্পায়ার আঙুল উঁচান, হাত নাড়ান অদৃশ্য কোনো শক্তির ইশারায়।

বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা যাকে ভক্তরা তো বটেই ক্রিকেট কর্তারাও মাথায় তুলে নেচেছেন কিছুদিন আগে পর্যন্ত। সেই মাশরাফিই এখন অপাংক্তেয়। খেলোয়াড় জীবনের অবসান হতেই পারে। সব খেলোয়াড়কেই থামতে হয় একদিন কোথাও না কোথাও। কথা সেটি নিয়ে নয়। কিন্তু ক্রিকেটীয় সামর্থ্য এবং চিন্তায় নিচের দিকে থাকা একটি দলকে যেভাবে বিশ্বসেরা দলগুলোর সঙ্গে মাঠে চোখে চোখ করে কথা বলতে শিখিয়েছেন মাশরাফি তার অবসর নিয়েও বিসিবি কী নাটকটাই না করলো!

অবশেষে চুক্তির বাইরে গিয়ে মুখ খুলেছেন মাশরাফি। বিসিবি’র স্বেচ্ছাচারিতার কিছুটা হয়তো মাশরাফি বলেছেন কিন্তু পাঠক-দর্শকরাও তো বুঝে নিয়েছেন অনেকটাই।

একটি কথা হয়তো ভুলে গেছেন ক্রিকেট কর্তারা। সাকিবরা মাঠে খেলেন বলেই তারা সংগঠক। এখন যদি তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ স্বেচ্ছাচারিতা আর একগুঁয়েমির কারণে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড় আঘাত হানেন ক্রিকেটের চেতনায়, সেটি না সাকিব, না দেশের ক্রিকেট কারো জন্যই ভালো নয়।

সাকিব অপরাধ করেছেন। শাস্তি পেয়েছেন। যথার্থ হয়েছে। কিন্তু সাকিব হয়তো ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কিন্তু অন্য খেলোয়াড়রা যে রুটি-রুজির ভয়ে মুখ খুলতেও ভয় পান। আর এর ফলে নীরব পতনের দিকে যাচ্ছে কি না ক্রিকেট- তার জবাব কে দেবে? সেই প্রশ্নও উঠছে কি না কারো কর্তাদের মনে?

মনে রাখবেন প্রতিভাসম্পন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও কিন্তু ধুঁকছে। অতএব এখনো সময় আছে সজাগ হওয়ার।

খান মুহাম্মদ রুমেল ।। গণমাধ্যমকর্মী