কার্বন নির্গমন বা কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বর্তমান পৃথিবীর বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকটের সর্বপ্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছে। গবেষকদের মতে, বর্তমানের পরিবেশ প্রায় ৩০ লাখ বছর আগের অবস্থাকে প্রতিফলিত করছে, যখন গ্রিনল্যান্ড ছিল সবুজে আচ্ছাদিত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ছিল বর্তমানের তুলনায় প্রায় ২০ মিটার বেশি এবং অ্যান্টার্কটিকা ছিল গাছপালায় সমৃদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফিরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) রিপোর্ট অনুযায়ী, শিল্পবিপ্লবের পূর্বে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব ছিল গড়ে ২৮০ পিপিএম, যা ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪২১ পিপিএম–এ দাঁড়িয়েছে যেটি বিগত ৪০ লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রা।

জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ও ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইপিসিসি) এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৭০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ৭৫ শতাংশ আসে CO₂ থেকে। এই নির্গমন বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ইতিমধ্যে প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় প্রায় ১.২°C বেড়েছে, যার প্রভাব হিসেবে দেখা যাচ্ছে ঘন ঘন হিটওয়েভ, হারিকেনের তীব্রতা বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক বর্ষণ, হিমবাহ গলন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি।

এইসব বিষয় নিয়ে প্রতিবছরই একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয় যেখানে সবাই তাদের নিজ নিজ দেশের জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যাগুলো তুলে ধরে থাকে। কপ হলো United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFCCC)-এর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন যা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়।

এই সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী দেশগুলো মিলিত হয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নীতি-নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন-পর্যালোচনা করে। ২০২৫ সালের কপ-৩০ ব্রাজিলের পারা রাজ্যের রাজধানী Belém-এ অনুষ্ঠিত হবে এবং ১০ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। পূর্ববর্তী জলবায়ু সম্মেলনগুলো (COP) বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এসব সম্মেলন জলবায়ু ন্যায্যতা ও বৈশ্বিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যদিও প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

কার্বন নির্গমনের সবচেয়ে বড় উৎস হলো বিদ্যুৎশক্তি খাত। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) এর তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক মোট জ্বালানি ব্যবহারের প্রায় ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত হয়। ২০২১ সালে, বিদ্যুৎ খাত বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত মোট কয়লার ৫৯ শতাংশ, প্রাকৃতিক গ্যাসের ৩৪ শতাংশ, তেলের ৪ শতাংশ, মোট নবায়নযোগ্য জ্বালানির ৫২ শতাংশ এবং প্রায় ১০০ শতাংশ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করেছে।

একই বছরে, বিদ্যুৎ খাত বৈশ্বিক জ্বালানি-সম্পর্কিত মোট CO₂ নির্গমনের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অংশের জন্য দায়ী ছিল। কৃষি খাত একাই বৈশ্বিক গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের প্রায় ১৮-২০ শতাংশের জন্য দায়ী (এফএও, ২০২১)। কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে প্রকাশিত গ্লোবাল কার্বন বাজেট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে মোট কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ ৪১.৬ বিলিয়ন মেট্রিকটনে পৌঁছাবে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ১ বিলিয়ন টন বেশি।

পৃথিবীর কার্বন নির্গমনের কারণে পরিবেশগত প্রভাবগুলো এখন ক্রমেই সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যমতে, তাপমাত্রার রেকর্ডকৃত বছরগুলোর মধ্যে ২০২৪-ই সবচেয়ে উষ্ণ বছর যা প্রাক শিল্প যুগের তাপমাত্রার চেয়েও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

বাংলাদেশে জলবায়ুর প্রভাব দৃশ্যমান এবং পরিমাপযোগ্য। দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বিস্তার এবং ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতার কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিগত ১০ বছরের প্রতিটি বছরই ছিল উষ্ণতম বছর। শুধু তাই নয়, সমুদ্রের তাপমাত্রাও বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্কটিক ও হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলছে। ইউনেস্কোর ‘জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের প্রায় ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতাও বেড়েছে এর মূল কারণ বায়ুমণ্ডল ও সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিশ্বের ১০৯টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১০ কোটি (প্রায় ১৮ শতাংশ) চরম বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে ভুগছে এবং সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটি মানুষ।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের অবস্থান বৈশ্বিক নির্গমনের প্রেক্ষাপটে খুবই নগণ্য। বিশ্ব কার্বন নির্গমনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও বাংলাদেশের মোট CO₂ নির্গমন বিশ্ব নির্গমনের মাত্র ০.৪ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো শিল্পোন্নত দেশগুলো শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বৈশ্বিক নির্গমনের পেছনে বিরাট ভূমিকা রাখছে এবং বিশ্বব্যাপী ৭৯ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো।

যেমন অস্ট্রেলিয়ায় মাথাপিছু কার্বন নির্গমন ১৮ দশমিক ৯৯ টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ দশমিক ৯৫ ও কানাডায় ১৪ দশমিক ২৫ টন, যা বিশ্বব্যাপী গড় নির্গমন (৪ দশমিক ৬৬ টন) থেকে অনেক বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু বার্ষিক CO₂ নির্গমন প্রায় ০.৬–০.৭ টন। অর্থাৎ বাংলাদেশের অবদান খুবই কম, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানগত দুর্বলতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি ভোগ করতে হয়।

বাংলাদেশে জলবায়ুর প্রভাব দৃশ্যমান এবং পরিমাপযোগ্য। দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বিস্তার এবং ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতার কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ বছরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১°C বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ আরও ৩২ সেন্টিমিটার বাড়লে বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ উপকূলীয় ভূমি পানির নিচে চলে যেতে পারে।

IPCC অনুমান করছে, ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর সংখ্যা হতে পারে কমপক্ষে ১ কোটি। উপকূলে পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, ধান, গম, সবজি উৎপাদন কমছে এবং পানযোগ্য জলের সংকট দেখা দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার মানুষ জীবন, ঘরবাড়ি ও কর্মসংস্থান হারাচ্ছে। শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিটস্ট্রোক, ডেঙ্গু এবং অন্যান্য জলবাহিত রোগ বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের জন্য কার্বন নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু অভিযোজন এই দুই দিকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সরকার ইতিমধ্যে Nationally Determined Contribution (NDC) হালনাগাদ করেছে, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট নির্গমন ২১.৮ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে।

পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ইটভাটা, নিম্নমানের জ্বালানি এবং অকার্যকর শক্তি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রধান কার্বন উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত শিল্প স্থাপন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও নির্গমন বাড়াচ্ছে।

বর্তমানে গ্রিড-সংযুক্ত ও অফ-গ্রিড মিলিয়ে ৬ মিলিয়নের বেশি সৌরহোম সিস্টেম ব্যবহার হচ্ছে, যা বিশ্বে সবচেয়ে বড় কমিউনিটি সোলার নেটওয়ার্কের একটি। বায়ুকে কাজে লাগিয়ে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ও বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের প্রকল্পও সম্প্রসারিত হচ্ছে। গণপরিবহনে ইলেকট্রিক বাস ও ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শহুরে পরিবহন-নির্ভর CO₂ নির্গমন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

অন্যদিকে অভিযোজন খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম সফল দেশ হিসেবে বিবেচিত। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতা, উপকূলীয় বাঁধ, মুজিব কিল্লা ধরনের আশ্রয়কেন্দ্র, সাইক্লোন শেল্টার, উপকূলীয় বনায়ন এবং কমিউনিটি ভিত্তিক দুর্যোগ প্রস্তুতি এসব কার্যক্রম দুর্যোগে মৃত্যুহার বহুগুণ কমিয়ে এনেছে। পাশাপাশি লবণ-সহনশীল ধান, ডুব-সহনশীল ধান, খরা-সহনশীল শস্য, রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং, ভাসমান কৃষি, সোলার পাম্প এসব কৃষিভিত্তিক অভিযোজন বিশ্বে আদর্শ মডেল হিসেবে বিবেচিত।

তবে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জও কম নয়। দ্রুত উন্নয়ন ও নগরায়ণের ধারা বজায় রাখতে গিয়ে দেশটি এখন এক জটিল ভারসাম্যের মুখোমুখি একদিকে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে, অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে নির্গমন কমাতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানি ব্যবস্থার বড় অংশই জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল বিশেষত প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও তেল। এই নির্ভরতা শুধু পরিবেশের জন্য নয়, বরং আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক মুদ্রার ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে। তাই নীতি সংস্কার এখন সময়ের দাবি, যাতে নবায়নযোগ্য ও পরিষ্কার জ্বালানির দিকে স্থানান্তর দ্রুত করা যায়।

পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ইটভাটা, নিম্নমানের জ্বালানি এবং অকার্যকর শক্তি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রধান কার্বন উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত শিল্প স্থাপন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও নির্গমন বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায়, নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন সৌর ও বায়ু প্রকল্পগুলিকে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে টেকসই বিনিয়োগ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যাতে এসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর থাকে।

অন্যদিকে, শিল্প ও পরিবহন খাতে লো-কার্বন প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এর মধ্যে শক্তি-দক্ষ যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রিক যানবাহন, গ্যাস রিকভারি সিস্টেম ও ক্লিন প্রোডাকশন পদ্ধতির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। পাশাপাশি, কঠোর পরিবেশ আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে একটি সবুজ ও টেকসই অর্থনীতির পথে বাংলাদেশ অগ্রসর হতে পারে। এই রূপান্তর কেবল জলবায়ু সংকট মোকাবিলার উপায় নয়—এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তারও ভিত্তি স্থাপন করবে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে উন্নত দেশগুলো ইতিহাসগতভাবে সবচেয়ে বেশি নির্গমন করেছে এ কারণে বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি হলো আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও লস অ্যান্ড ড্যামেজ ক্ষতিপূরণ। ইতিমধ্যে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, অ্যাডাপ্টেশন ফান্ড এবং কপ-এ গৃহীত ক্ষতিপূরণ কাঠামো বাংলাদেশের জন্য অর্থায়নের সম্ভাবনা তৈরি করছে।

তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ভবিষ্যতের বড় শর্ত। এবারের কপ-৩০ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য থাকবে গ্লোবাল তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা, অভিযোজন (adaptation) ও নির্গমন হ্রাস (mitigation)-র অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং তহবিল ও প্রযুক্তি হস্তান্তর। কার্বন নির্গমন এখন আর শুধু বিজ্ঞান বা পরিবেশের বিষয় নয়; এটি অর্থনীতি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, জলসম্পদ, নগরায়ন, মানব উন্নয়ন ও বৈশ্বিক ন্যায়ের প্রশ্ন।

পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে হলে এবং বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে এখনই জ্বালানি ও নীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা আশাবাদী, এবারের কপ এ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে “লস ও ড্যামেজ তহবিল” (Loss & Damage Fund) দ্রুত কার্যকর হবে এবং পর্যাপ্ত ও অনুদান-ভিত্তিক অর্থায়ন নিশ্চিত করা হবে।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ; অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ; যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)