প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা মহামারি করোনার সাথে লড়ছি। মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (২৫ জুন) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি দেশে করোনায় একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। আমাদের উচিত অনেক বেশি সচেতন হওয়া।

রাস্তায় বের হলে বোঝা মুশকিল, যে দেশে করোনা আছে। বিনা কারণে ঘোরাঘুরি আমরা এখনো বন্ধ করতে পারছি না। আমরা এখনো পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি না। হয়তো অনেকে মনে করছি আমি তো ভ্যাকসিন নিয়েছি আমার কী সমস্যা? আবার অনেকে হয়তো এটিও ভাবছি আমার করোনা হবে না। এসব আমাদের ভ্রান্ত ধারণা। কেননা অসচেতন হয়ে চলাফেরা করলে যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।

এতদিন পরেও যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে কবে আমরা সচেতন হব? করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে পরবর্তী সাত দিন সারাদেশে আবারও কঠোর লকডাউন জারি করা হচ্ছে। দেখা যাবে এই কঠোর লকডাউনকে হয়তো অনেকে ভঙ্গ করার চেষ্টা করবেন।

রাস্তায় বের হলে বোঝা মুশকিল, যে দেশে করোনা আছে। বিনা কারণে ঘোরাঘুরি আমরা এখনো বন্ধ করতে পারছি না। আমরা এখনো পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি না।

আগের লকডাউনগুলোতে আমরা লক্ষ্য করেছি, মানুষ কতটা অসচেতন। সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করতে দ্বিধা করিনি। আগে যাই করেছি এবার সচেতন হই। করোনাকে অবহেলা করার আর কোনো সুযোগ নেই।

করোনার এ দিনগুলোতে আমাদের অনেকেরই বাড়িতে বসে কাজ করতে হচ্ছে। এতে করে আমাদের শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই আমাদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন কায়িক পরিশ্রমের গুরুত্বকে অবহেলা না করি। কারণ আমাদের শারীরিক সুস্থতার অনেকটা শারীরিক পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে। তাই শুধু বসে না থেকে যতটুকু সম্ভব নিজেকে ঘরের কাজে, বাগান করা, হাঁটাচলা করা, ব্যায়াম করা ইত্যাদিতে ব্যস্ত রাখতে হবে। সাথে সাথে আমাদের প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমেরও প্রয়োজন।

দিনে দুই থেকে তিনবার নিয়মিত খাবার খাওয়া এবং অতিমাত্রায় না খাওয়া সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার খেলে তা আপনার দেহে প্রয়োজনীয় জ্বালানি যেমন সরবরাহ করবে তেমনি তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিরও জোগান দিবে।

করোনা মোকাবিলায় নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করি এবং পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।

দেহের স্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে ছয়টি খাদ্য গ্রুপের সব খাবারই আনুপাতিক হারে খেতে হবে। তার মানে হল, যথাযথ পরিমাণে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, মিনারেল, ভিটামিন এবং পানীয় গ্রহণ করতে হবে।

করোনা আমাদের যে সামাজিক-দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতায় আবদ্ধ করে দিয়েছে তাকে বজায় রেখেও আমরা আমাদের সামাজিক সম্পর্ক সুরক্ষা করতে পারি। এজন্য বর্তমান সময়ের ইন্টারনেট সুবিধাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে পারি।

আত্মীয়স্বজনের অনেকেই হয়তো করোনায় আক্রান্ত, আমরা ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলে সাহস জোগাতে পারি। আত্মীয়স্বজন যত দূরেই থাকুক না কেন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাদের সাথে সরাসরি কথা বললে নিজের সময়টা যেমন ভালো কাটবে তেমনি তারা মনে শক্তি পাবে আর মানসিক উদ্বেগকেও দূর করতে সহায়তা করবে।

আসুন, করোনা মোকাবিলায় নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করি এবং পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। একই সাথে সরকারের প্রচেষ্টাকে সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে পূর্ণ সহায়তা করি।

মাহমুদ আহমদ ।। গবেষক ও কলামিস্ট