জন্মদিনে তাকে গভীর ভালোবাসায় স্মরণ করি। তার জন্মদিন আমাদের এই প্রজন্মের শিশুদের কাছে শুধু স্মরণের দিন নয়, তার মানবিক বোধ ধারণ করার দিনও।

অক্টোবর মাসকে আমি নানা কারণে স্মরণ করি। এ মাসে বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হয়। একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নির্মম শিকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিশুপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন এ মাসে এবং এই মাসটি আমার নিজের ছেলে শমিকেরও জন্মমাস।

এ মাসের ঋতু শরৎ। এ মাসের ফুল সুরভিত শিউলি। এত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের পরও মন কেন বিষণ্ন হয়ে যায়? নানাবিধ কার্যকারণ একটার সঙ্গে আরেকটা যুক্ত হয়ে যায় বলে সময়ের হেরফের হয়।

আগের সময় পরে আসে, পরের সময় আগে চলে যায়। আমরা সূত্র বাঁধি! বাঁধি বলেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়। যারা ভালো কিছু করতে চায় না, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কারণে, তারা নির্মমভাবে হত্যা করে শিশুদের।

একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নির্মম শিকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিশুপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন এ মাসে...

পঁচাত্তর সালের আগস্ট মাসে শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে পরিবারের শিশুদেরও।

আমরা জানি, বঙ্গবন্ধুর পরিবারে তাদের কনিষ্ঠ সদস্যের নামটি প্রখ্যাত মনীষী ব্রার্টান্ড রাসেলের নামের অনুসরণে রাখা হয়েছিল।

ব্রার্টান্ড রাসেল ভিয়েতনামে আমেরিকান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন। শিশু রাসেলের তেমন কিছু করার সুযোগ হয়নি। কে জানে বেঁচে থাকলে সে হয়তো বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার উদ্যোগ নিতে পারত।

রাসেল বেঁচে থাকলে এই দাবি তার কাছেই করতাম আমি। আফসোস, আমি তা পারিনি। তবে আনন্দ একটাই, শেখ রাসেলের প্রিয় ‘হাসু আপা’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছেন। জাতির পিতা হত্যার বিচার করেছেন। বিচার হয়েছে শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্ট কালরাতের সব হত্যার।

বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে হত্যাকারীদের অনেকেই এখনো পালিয়ে আছে পৃথিবীর নানান দেশে। এদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। তাহলে শিক্ষা পাবে হত্যাকারীরা। সবাই জানবে, শিশু হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ যারা করে, তাদের কোনো রেহাই নেই।

আনন্দ একটাই, শেখ রাসেলের প্রিয় ‘হাসু আপা’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছেন। জাতির পিতা হত্যার বিচার করেছেন।

জাতির পিতা ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেন। জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণার ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিনি শিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য শিশু আইন প্রণয়ন করেছিলেন।

সদ্য স্বাধীন দেশে শিশুর শিক্ষা, সুরক্ষা ও উন্নয়নে নিয়েছিলেন কল্যাণকর বিভিন্ন পদক্ষেপ। সেই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি, সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন আইন, নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে থাকে।

বিশ্বজুড়েও শিশুদের নিয়ে হইচই শুরু হয়। শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন, র‍্যালি, আনন্দ-অনুষ্ঠান উদযাপন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আরও কত কি! পাশাপাশি শিশু রাসেলের মতো আর কোনো শিশু যেন হত্যার শিকার না হয়, নির্যাতিত না হয়, সে ব্যবস্থাও চাই।

এই অক্টোবর মাসে এইটুকু প্রত্যাশা পূরণে বড়রা এগিয়ে আসুন, সেই কামনা করি। না হলে শিশুরা কি দায়িত্ব নেবে এসবের?

সেলিনা হোসেন ।। কথাসাহিত্যিক