দলের কাছ থেকে ‘অসৌজন্যমূলক’ ভাষায় চিঠি পেয়ে হতবাক হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলছেন,  ২৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আমাকে পাঠানো শোকজ নোটিশে দলে যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার তারিখ, নামের বানানসহ অনেক ভুল ছিল। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম-মহাসচিব এমন কঠিন, আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলব করায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি।

শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর (সোমবার) দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাকে শোকজ নোটিশ দেয় বিএনপি। চিঠির জবাবে আজ শনিবার মেজর (অব.) হাফিজ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ব্যক্তি রুহুল কবির রিজভী একজন ভদ্র, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা, তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে, তার কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি আশা করিনি

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ

মেজর (অব) হাফিজ বলেন, বিএনপিতে যোগদানের পূর্বেই আমি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপিতে যোগদান করি। আমি বিগত ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এখানে প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। ব্যক্তি রুহুল কবির রিজভী একজন ভদ্র, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা, তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে, তার কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি আশা করিনি।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই পত্রে বর্ণিত অভিযোগ সম্পর্কে আমার বক্তব্য হলো- আমাকে কখনও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এছাড়া কৃষক দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পদের অফার (প্রস্তাব) অসুস্থতার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছরের বেশি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা স্থায়ী কমিটিতে আমার চাইতে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা বেশি হবে না বলেই ধারণা।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদানের আগেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে, এ কারণেই বরিশাল যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ দায়ের করার কথা জানা নেই। এছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি গত দশ বছর ধরে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।

হাফিজের অভিযোগ, অতীতে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত স্মরণীয় দিবসে বিএনপির কর্মসূচিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও গত দেড় বছরে এ ধরনের অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এতে বোঝাই যাচ্ছে বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোণঠাসা করে রাখার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে।

গত এক বছরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ৬টি সভায় নিজের অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে হাফিজ বলেন, এসব অনুষ্ঠানে মধ্য দুটির আয়োজক ছিল মুক্তিযোদ্ধা দল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি দুটি, বিএনপিপন্থী সংগঠন একটি। দেশের খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধারা এই সভায় অংশ নিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, শোকজের চিঠিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, অসৎ উদ্দেশ্যে আমি বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছি। এটি একেবারেই অসত্য, ঢালাও মন্তব্য। বিগত ১২ ডিসেম্বর (শনিবার) প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধানসহ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় আমি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছি।

এএইচআর/টিএম/এনএফ