পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ তো আজীবন ক্ষমতায় থাকবে না, তাই সাবধান হয়ে যান। আপনারা জনগণের সেবক। ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অশালীন ও শিষ্টাচার বিবর্জিত কথা বলবেন না; দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।

র‍্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে র‍্যাবের ওপর৷ এখন আর কার কার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে তা দেখার বিষয়। এখন জনগণের নিষেধাজ্ঞা আপনাদের (পুলিশ) ওপর আসবে। এ নিষেধাজ্ঞা লজ্জার। সাবধান করছি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করলে দেশবাসী ক্ষমা করবে না।

রোববার বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, এই বীর চট্টলা থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ইতিহাস থেকে জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মুছতে পারেনি। কারণ জিয়াউর রহমান আমাদের হৃদয়ে আছেন, এদেশের মানুষের হৃদয়ে আছেন। মুক্তিযুদ্ধে যার যা অবদান, প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবদান স্বীকার করতে হবে।

তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানী, জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করতে হবে; লাখো শহীদের কথাও স্বীকার করতে হবে যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। স্বীকার করতে হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি দুই সন্তান নিয়ে এ চট্টগ্রামে ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। তাকে রেখে জিয়াউর রহমান ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বেরিয়ে যান। পরদিন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। আমরা যখন এসব কথা বলি তখন আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে।

তিনি আরও বলেন, এ সরকার পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করছে। এক ব্যক্তিকেই মুক্তিযুদ্ধের সব বানাচ্ছে, যে ব্যক্তি তখন দেশেই ছিলেন না। দেশে ছিলেন জিয়াউর রহমান।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সুচতুরভাবে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তারা। তারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যায়। এখন তারা বলছে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? নিজেদের ইচ্ছেমতো কাটাছেঁড়া করে যে সংবিধান তারা নিজেদের মতো বানিয়ে নিয়েছে? পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে বলছি, সময় শেষ, যতই ডিগবাজি খান, কোনো লাভ হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সরকার হঠাৎ ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিল। মার্কিন মন্ত্রী এসে ধমক দিল আর অমনি সরকার ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়ে দিল। আসলে এদের কোনো চরিত্র নেই। জনগণের প্রতি ভালোবাসা নেই। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে শুধু। আর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বিকৃত করে। এদের পরাজিত করতে হবে। আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। খুন-গুমের অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা লজ্জার, দেশের জন্য লজ্জার, জাতির জন্য লজ্জার। অথচ আওয়ামী লীগের নির্দেশে খুন-গুমের ঘটনা ঘটছে। তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সব রাজনৈতিক দল, সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।  চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আজ থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। আসুন, আমরা সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার প্রমুখ।

কেএম/আরএইচ