লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি’র (একাংশ) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম / ছবি- ঢাকা পোস্ট

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দুজন নেতা সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন— এমন দাবি করেছেন জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি’র (একাংশ) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘যেসব রাজনৈতিক দলের নেতারা আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছেন, তারা সরকারের এজেন্ট। এমন দুজন এজেন্ট বিএনপির দুই মিত্র-জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটে আছে। তারা সরকারের পক্ষ হয়ে জাতীয় সরকার নিয়ে আলোচনা করছেন।’

শাহাদাত হোসেন সেলিম এলডিপির একাংশের মহাসচিব। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। সেলিম এক সময় বিএনপির নেতা ছিলেন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।

ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক আদিত্য রিমনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচন, আগের দল বিএনপিতে ফিরে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন শাহাদাত হোসেন সেলিম। নিচে তা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছে বিএনপি জোটের অনেক শরিক। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জোট-শরিকদের মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার দলের অবস্থান কী?

শাহাদাত হোসেন সেলিম : নির্বাচনের আগে যারা জাতীয় সরকারের কথা বলছেন, তীব্র ভাষায় আমরা তাদের প্রতিবাদ করেছি। এটা একটা সরকারি ষড়যন্ত্রের অংশ। নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার করার এখতিয়ার কারও নেই। কারণ, সেই জাতীয় সরকারে কোন কোন রাজনৈতিক দল থাকবে, কোন ক্যাটাগরিতে কোন রাজনৈতিক দল থাকবে, সেই রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি-না, যে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি জাতীয় সরকারে থাকবে, তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে কি-না, সেই নির্বাচন প্রভাব মুক্ত হবে কি-না, এসব প্রশ্ন আসবেই।

রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বারবার ব্যর্থ হয়েছে / ফাইল ছবি

আমরা মনে করছি, নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার গঠনের আলোচনা সরকারের পক্ষ থেকে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে কিছু লোককে দিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু লোক সাবেক মন্ত্রী, বিভিন্ন ঘাটের পানি খাওয়া লোক; তারা মনে করেন আমরা জাতীয় পর্যায়ের নেতা। এ ধরনের সরকার হলে ভাগ্য খুলতে পারে— তারাই জাতীয় সরকারের কথা বলছেন। আমরা সব সময় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছি। এর কোনো বিকল্প নাই।

নির্বাচনকালীন সরকার শুধুমাত্র নির্বাচন করবে। যারা জাতীয় সরকারের কথা বলছেন, তারা বলছেন রাষ্ট্র মেরামত করবেন। তাদের এ কাজ করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছে কে? তাদের ম্যানডেট দিয়েছে কে? তাদের অবস্থা হচ্ছে ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ এর মতো। তাদের নির্বাচনী এলাকায় নিজের প্রতীকে জয়লাভের সম্ভাবনা শূন্য শতাংশ। সুতরাং তারা সরকারি চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে এ ধরনের কথা বলছেন।

তাদের এমন প্রস্তাব একটা সময় শেখ হাসিনা বিনাবাক্যে মেনে নেবেন। কারণ, বর্তমানে সরকার একা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সংসদে একাধিক দলের সদস্য আছেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নির্বাচনের আগে সেসব দলের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে একটা মন্ত্রিসভা গঠন করে, সেখানে সংরক্ষিত কোটায় চারজনকে নিয়ে বলবে এটা জাতীয় সরকার। সরকারের এ ফরমুলা বাস্তবায়নের জন্য যারা বিদেশি প্রভুর নির্দেশে রাজনীতি করে, তারাই জাতীয় সরকারের কথা বলছেন। পক্ষান্তরে তারেক রহমান বলছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

ঢাকা পোস্ট : তাহলে আপনি কী বলতে চাচ্ছেন, বিএনপি জোটে সরকারের এজেন্ট রয়েছে…

শাহাদাত হোসেন সেলিম : অবশ্যই, এমন একজন আছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। আরেকজন আছেন ২০ দলীয় জোটে। সরকারের এ দুই এজেন্ট জাতীয় সরকারের দাবিতে সরব। আমি তাদের নাম বলব।

পক্ষান্তরে, শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা ২০ দলীয় জোট নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দল দৃঢ়ভাবে মনে করে নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এখানে বিএনপির একটা সফলতা হচ্ছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এখন বিভিন্ন জনমতে উঠে এসেছে, দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ মনে করে নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। এখানে তারেক রহমান একটা যুগান্তকারী বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করে অপশাসন দূর করার পর রাষ্ট্র মেরামতের জন্য সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করবেন। সেখানে কোনো হেভিওয়েট নেতা কোনো কারণে যদি নির্বাচনে পরাজিত হন, তাকেও সরকারে অন্তর্ভুক্ত করবেন। এছাড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধাবীদের সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করবেন।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি’র (একাংশ) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম / ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা পোস্ট : দলীয় সরকারের অধীনে হলে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আপনি কি নির্বাচনে অংশ নেবেন?

শাহাদাত হোসেন সেলিম : ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বিএনপিও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। শুধু তা-ই নয়, সরকারের কয়েকটা পদলেহনকারী দল ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেবে না।

ঢাকা পোস্ট : আপনার কি মনে হয় বিএনপি আন্দোলন করে সরকারকে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করাতে পারবে?

শাহাদাত হোসেন সেলিম : নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রশ্নে আন্দোলন করতে হবে কেন? এটা তো মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার বিভিন্ন বাহিনীকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। দিনের ভোট রাতে করছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বাধ্য সরকার। এর কোনো বিকল্প নাই।

ঢাকা পোস্ট : এমন আত্মবিশ্বাস কীভাবে পাচ্ছেন?

শাহাদাত হোসেন সেলিম : এটা এখন জনমত। এর পক্ষে প্রবল জনমত তৈরি হয়েছে। সরকারের কোনো দিকে যাওয়ার রাস্তা নাই। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে—  এমনটি আর ২০২৩ সালের নির্বাচনে সম্ভব নয়।

ঢাকা পোস্ট : শোনা যাচ্ছে, আপনি আবারও বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা করছেন— কতটুকু সত্য?

শাহাদাত হোসেন সেলিম : আমার বিএনপিতে ফেরা, না ফেরার সম্ভাবনা নির্ভর করছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর। তিনি আমার আদর্শিক নেতা। তিনি যখন আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন, আদেশ দেবেন, আমি তা পূর্ণশক্তি দিয়ে পালন করব। আমি যেখানে যে অবস্থায় থাকি, আমার আদর্শিক নেতা তারেক রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তিনি ইতোমধ্যে ‘নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার এ ঘোষণা নতুন দিশা সৃষ্টি করবে।

এএইচআর/এমএআর