প্রায় দুই বছর পর কেন্দ্রীয় কমিটির সব নেতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এ  সভা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে । সভা থেকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, কেন্দ্রীয় জাতীয় সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে— এমনটি মনে করছেন দলটির নেতারা।

কার্যনির্বাহী সভার আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে- শোকপ্রস্তাব পাঠ, ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ১১ জুন কারামুক্তি দিবস, ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, সাংগঠনিক ও বিবিধ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, প্রায় দুই বছর পর এ সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে সভা থেকে। আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত ও গতিশীল করার নতুন কৌশল নির্ধারণ হতে পারে এ সভায়।

দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ হলেই সভায় অংশ নেওয়া যাবে। তবে এবার নির্দিষ্ট না করে কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যকে সভায় উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘আগামীকালের সভায় সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আমাদের দলের সাংগঠনিক অবস্থার পর্যালোচনা করা হবে। আমাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা রিপোর্ট পেশ করবেন। তার ভিত্তিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আরেকটি বিষয়ে আলোচনা হবে, সেটি হলো ঐতিহাসিক ৭ জুন আমরা কীভাবে পালন করব।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় মূল আলোচনার বিষয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পাশাপাশি সাংগঠনিক বিষয় আলোচনায় আসতে পারে।’

জাতীয় সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হবে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ আছে। তা নিয়ে অনেকেই মুখরোচক আলোচনা করতে পারে।‌‌ তবে জাতীয় সম্মেলন ডিসেম্বরে হবে। সেটা নিয়ে এখনই আলোচনার সুযোগ নেই।’

দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে সভায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধীদের বর্তমান কর্মকাণ্ড উঠে আসতে পারে । এ থেকে বিরোধীদের মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের কর্মকৌশল নির্ধারণ হতে পারে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হবে। এতে জাতীয় নির্বাচন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল, সংগঠন গোছানো নিয়ে আলোচনা হবে। আর যারা ঈদের পরে, কোরবানির পরে, শীতের পরে, বর্ষার পরে, কখন ফুল ফুটবে সেই ফুলের ঘ্রাণের অপেক্ষায় যারা বসে আছে —  তাদের হুমকি-ধামকির রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।’

‘আরও বেশি করে তাদের যেন বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করে, সেই জায়গাটা তৈরি করার জন্যই আমরা নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে জনসংযোগ-জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে দলকে প্রস্তুত করব, জনগণকে প্রস্তুত করব। প্রস্তুত করার কাজটি আমরা এবারে আমাদের মিটিং এ আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট পথপরিক্রমা তৈরি করব’— বলেন তিনি। 

নাছিম বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত, দেশবিরোধী অপরাজনীতি, ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার রাজনীতি, বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ইতি টানতে বাংলাদেশের মানুষকে প্রস্তুত করার যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব, তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবসময় পালন করে আসছেন। আগামীতেও সেই দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করব। উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া, পন্থা সুনির্দিষ্ট করে দিক-নির্দেশনা তৈরি করা হবে এবারের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব ঘোষণা করেছেন, এ ডিসেম্বরে কমিটির তিন বছর মেয়াদ শেষ হবে। ডিসেম্বর মাসেই ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে এখন আমরা ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, থানা, জেলা পর্যায়ের সম্মেলনের কাজগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি।’

গত বছরের ১৯ নভেম্বর সর্বশেষ সীমিত পরিসের আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র (সাময়িক বহিষ্কৃত) জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি গণভবনে সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এইউএ/আরএইচ