ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি / ফাইল ছবি

নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সাতটি দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চে’ থাকছেন না এই মঞ্চের অন্যতম অংশীদার ভাসানী অনুসারী পরিষদ সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মূলত এই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থাকতে না চাওয়া এবং বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনকালীন সরকার ও জাতীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে তার দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের দাবির মিল না থাকায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এই রাজনৈতিক মঞ্চের সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখা হচ্ছে না। তবে তিনি না থাকলেও ‘আপাতত’ ভাসানী অনুসারী পরিষদের দুজন সদস্য গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিনিধিত্ব করবেন। 

মঞ্চের উদ্যোক্তা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৪ মে) ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘসময় আলোচনা করেন গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগের অংশীদার গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। এ সময় ভাসানী অনুসারী পরিষদ সংগঠনের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীরও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানিয়ে দেন, গণতন্ত্র মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে থাকবেন না তিনি। মঞ্চের শরিকরাও তাকে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামীতে এই মঞ্চের কোনো বৈঠকেও তাকে দেখা যাবে না। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে সবসময় থাকবেন তিনি।

গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থাকতে না চাওয়া এবং বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনকালীন সরকার ও জাতীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে তার দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের দাবির মিল না থাকায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এই রাজনৈতিক মঞ্চের সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখা হচ্ছে না

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। আমি রাজনীতিও করি না। আমি গণতন্ত্র মঞ্চের মুখপাত্রও নই। তবে এই রাজনৈতিক মঞ্চের সঙ্গে ভাসানী অনুসারী পরিষদের দুজন সদস্য যুক্ত থাকবেন। আমি তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে থাকব।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী / ফাইল ছবি

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনকালীন সরকার বা জাতীয় সরকার নিয়ে যেসব প্রস্তাব দিয়েছি, দেশের একজন নাগরিক হিসেবেই দিয়েছি। এর সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের দাবির মিল নাও থাকতে পারে বা তারা একমত নাও হতে পারে। এটা তাদের ব্যাপার।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের আগের বৈঠকগুলোতে তারা চেয়েছিল বলে আমি ছিলাম।     

গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোক্তারা বলছেন, আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে- আগামী নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ। তারপর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। জাতীয় সরকার গঠন, রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবি রয়েছে আমাদের। কিন্তু আমরা নির্বাচনের আগে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দেওয়া দুই বছর মেয়াদি জাতীয় সরকারের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নই। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গেও আমাদের (গণতন্ত্র মঞ্চ) শরিক দলের কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। সবমিলিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকছেন না।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক / ফাইল ছবি

গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে থাকছেন না। আজ ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতাদের সঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বৈঠকের পর জোনায়েদ সাকির সঙ্গে তার বৈঠক হয়। সেখানে তার এই মঞ্চের সাংগঠনিক দায়িত্বে না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না / ফাইল ছবি

গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগের অংশীদার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের আগামী মিটিংগুলোতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী থাকবেন না। শুধু তিনি কেন, তার সংগঠন থাকতে পারবে কি না, সেই বিষয়েও আমরা সিদ্ধান্ত নেব। কারণ, যখন যা ইচ্ছা তা চাইলেই বলা যায় না।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে এর নাম ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ রাখা হয়েছে।

এএইচআর/জেডএস/এমএআর/