আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের নজর ৯টি ওয়ার্ডে। নগরীর ১৯ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৬০ হাজার ভোটারের বাস। এই ওয়ার্ডগুলোর ভোটেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে প্রার্থীদের। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই পাওয়া গেছে।
 
আসন্ন নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। এছাড়া মাঠে আছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারও। আরফানুল হক রিফাত ছাড়া বাকী দুজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে প্রার্থীরা তত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচার-প্রচারণায়।

৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কোটবাড়ি, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, চৌয়ারা বাজার, রঘুপুর, বাখরাবাদ, ইয়াসিন মার্কেটসহ আরও কিছু এলাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব এলাকায় প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরী। আর কিছু অংশের ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

কুসিক নির্বাচনে এ ভোটগুলো প্রার্থীদের জয়ের জন্য নিয়ামক হয়ে উঠবে। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে যারা এই ভোটগুলো বাগে আনতে পারবেন তারাই কুসিক মেয়র হিসেবে জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবেন- এমনটাই দাবি সাধারণ ভোটারদের।

কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে জানা গেছে ভোটের মাঠের আরও নানা রকম হিসাব। নগরীর কেউই এখনো কাউকে মেয়র হিসেবে এগিয়ে রাখতে পারছেন না।

তারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হবেন তা বলা মুশকিল। তবে সব প্রার্থীরই সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোট যেমন অন্য বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি বিএনপির ভোটও দুই প্রার্থীর মধ্যে ভাগাভাগি হবে। ফলে সব প্রার্থীই এখনো হিসাবে আছেন। আর সব প্রার্থীর টার্গেট এখন ৯ ওয়ার্ডের ৬০ হাজার ভোটের দিকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেন, কুমিল্লা শহরের যারা ভোটার আমি সবার ভোট প্রত্যাশা করছি। সবার কাছে ভোট ও দোয়া চাই।

বর্তমান মেয়র সাক্কুরও খেয়াল আলোচিত ৯ ওয়ার্ড। এগুলো সাক্কুর দিকেই ঝুঁকে আছে বলে দাবি করেন তার নির্বাচন কর্সূচি সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা এক নেতা। ওই নেতা বলেন, সাক্কুর পক্ষে ভোটবাক্সে বিভিন্ন দলের ভোট পড়বে। ভোটের মাঠে তেমন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ভোটারদের আওয়াজ কম। সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠিত হলে আমি জিতব।

বিএনপি থেকে বিহিষ্কৃত আরেক মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের শহরে সুনাম আছে। তার ব্যাপারে ‘শিক্ষিত-মার্জিত’ এমন নানা যোগ্যতার আলোচনা সবার মুখে মুখে। কিন্তু তার নামে ১৮/১৯টি মামলা রয়েছে। ফলে মেয়র হলেও চেয়ারে বসতে পারবেন না বলে কুমিল্লা শহরে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা আছে।

মেয়র নির্বাচনে সাক্কুকে হারাতেই ভোটের লড়াইয়ে নামা কায়সার শহরের মানুষের কাছে সন্তোষজনক সাড়া পাওয়ায় তার ভেতরেও জয়ী হওয়ার আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

শহরঘুরে আরও দেখা গেছে, কেন্দ্র থেকে বিএনপির এই দুই প্রার্থীর ভোটে নেতাকর্মীকে না নামতে বলা হলেও দায়িত্বশীল নেতারা ভেতরে ভেতরে ভোটের কাজ করছেন। পদ-পদবীহীন কর্মীরা সাক্কু-কায়সার ভাগ হয়ে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন।

টমছম ব্রিজ এলাকার বিএনপির সমর্থক শামসুল আরেফিন বলেন, নির্বাচনে নানা দিক আছে। প্রার্থী সবাই যোগ্য। এখানে উন্নয়নের সম্ভাবনা ও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা কে বজায় রাখতে পারবেন তেমন মেয়র এলাকার মানুষের প্রত্যাশা। মেয়র সাক্কু দুই বার মেয়র ছিলেন শহরের মানুষের তেমন ক্ষতি হয়নি। উন্নয়ন কম-বেশি হয়েছে। তবে রিফাত নির্বাচিত হলে জমকালো উন্নয়ন হবে। কিন্তু শহরে এক নায়কতন্ত্র কায়েমের একটা শঙ্কা রয়েছে।

আগামী ১৫ জুন কুসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন পাঁচ প্রার্থী।

এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী থাকছেন ভোটের মাঠে। ৫ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এইউএ/এসএম/জেএস