হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক করার পর রিং বসানোর ৭২ ঘণ্টা পেরিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি। তিনি এখন অনেকটা ‘ঝুঁকিমুক্ত’ বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। তবে, বয়স ও অন্যান্য রোগ বিবেচনায় নিলে তিনি কতক্ষণ ‘ঝুঁকিমুক্ত’ থাকেন তা নিয়ে চিন্তিত তারা।

সোমবার (১৩ জুন) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাপ্তাহিক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই বৈঠকে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে অংশগ্রহণকারী স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বৈঠকে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। চিকিৎসকরা মনে করছেন, ম্যাডামের হার্ট অ্যাটাকের যে ঝুঁকিটা তৈরি হয়েছিল, সেটা থেকে তিনি এখন অনেকটা মুক্ত। চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে হ্যাপি।’

এই নেতা আরও বলেন, ‌‘ম্যাডাম এখন ঝুঁকিমুক্ত হলেও সেটা কত সময়ের জন্য বলা মুশকিল। কারণ ম্যাডামের তো এক-দুইটা সমস্যা নয়। তিনি ডায়াবেটিক, ফুসফুস জটিলতা, লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। তাই চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ম্যাডামের তো হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, রিং বসানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে আরও দুটি ব্লক ধরা পড়েছে। উনার যে শারীরিক অবস্থা, নতুন করে রিং বসানোর মতো অবস্থায় তিনি আছেন কি না সেটা নিয়ে চিকিৎসকরা চিন্তিত।’

যদিও মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকালে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভালো নেই। আমাদের নেত্রীকে দুই নয়ন দেখতে পারছি না অথবা তার আশপাশের বারান্দায় দাঁড়িয়েও একটু কষ্ট লাঘব করার সুযোগ পাই না। পত্রপত্রিকায় তার চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসকের মাধ্যমে যেটুকু আসে, এরচেয়ে বেশি জানার সুযোগ আমার নেই।’ 

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, গতকালের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অধিকাংশ সদস্যের আলোচনায় উঠে এসেছে বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি। তাদের মত হলো, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে নতুন করে আবেদন করে কোনো লাভ নেই। কারণ সরকার চায় না তার বিদেশে চিকিৎসা হোক। আর আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে। ফলে, সেখানে গিয়েও কোনো লাভ নেই। তাই বিএনপিকে এই অবস্থা মেনে নিতেই হবে। যতদিন না আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা না যায়।  

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘সরকার তো ম্যাডামকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। আমরা তো বারবার বিদেশে তার চিকিৎসার কথা বলে আসছি। এখন নতুন করে কী করা যায়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। দেখা যাক কী হয়।’

গত ১১ জুন গভীর রাতে হৃদরোগের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। পরে সকালে তার এনজিওগ্রাম করে হার্টে ব্লক ধরা পড়লে রিং বসানো হয়। বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। এর আগেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দুই দফায় অনেক দিন এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এএইচআর/ওএফ/জেএস