বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইতোমধ্যে বহু হত্যা-খুন-গুম করেছে। তার ধারাবাহিকতায় নুরে আলম ও আব্দুর রহিমকে হত্যা করেছে।

রোববার (৭ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কৃষক দলের বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

ভোলা জেলায় ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম হত্যা ও সারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে কৃষক দল।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষক সমাজ এখন চোখে অন্ধকার দেখছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেচের চিন্তায় যখন কৃষক সমাজ উদ্বিগ্ন, তখন এই সরকারের তাতে কিছু যায় আসে না, কারণ তাদের জনগণের প্রয়োজন নেই। তার আছে পুলিশ বাহিনী, র‌্যাব-বিজিবি বাহিনী, বন্দুক বাহিনী, সেনাবাহিনী- এই বাহিনী দিয়ে সে দেশ চালাবে। আর হবে না, এ দেশের মানুষ আর এইভাবে দেশ চালাতে দেবে না। কারণ এরা আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেছে। তাই এ সরকারকে আর টিকতে দেওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, আমি স্পষ্টভাবে দাবি তুলে ধরতে চাই, যে পুলিশ অফিসার গুলি করেছে, আমরা শুনেছি তিনি নাকি পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান। কী অবস্থা ঘটেছিল যে আপনি তাকে (আলম-আব্দুর রহিম) গুলি করলেন। আব্দুর রহিম সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে, আর ছাত্রনেতা নূরে আলম মাথায় ১৬টা স্প্লিন্টার নিয়ে তিনদিন পর মারা গেছে। আরও ১৯ জন এখনি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লড়াই করছেন। আমি ওই পুলিশ অফিসারের গ্রেপ্তার চাই, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লোকসানের দিকে যাচ্ছে। লোকসানে কেন যাবে, পাঁচ বছর আগে এই পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন তো লাভ করেছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল, কিন্তু আপনারা দাম কমাননি। এখনো আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে, অথচ আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ বললেন- বিশ্বের অনেক দেশে নাকি তেলের দাম বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম হ্রাস পায় তখন অন্যান্য দেশগুলো তারাও তেলের দাম কমায়। আর আমাদের দেশে তখন তেলের দাম বাড়ানো হয়। কারণ তারা যে দুর্নীতি করে লুটপাট করে সেই টাকাকে হালাল করার জন্য জনগণের পকেট থেকে নিয়ে যায়।

আমরা সবাই সংঘবদ্ধ হচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব রাজনৈতিক দলগুলোকে বলছি আসুন আমরা সবাই ছোটখাটো ভুলগুলো অবসান করে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র -সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হই। 

আওয়ামী লীগের দেওয়া তথ্যে জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গরিবকে গরিব বানিয়েছে, ধনী কে আরো ধনী, তারা সঠিক তথ্য দেয় না। জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই তাদের এই মিথ্যা তথ্য। তথ্যযাত্রায় নিজেকে প্রশ্ন করুন তাহলেই দেখতে পাবেন কীভাবে তেলসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে কৃষক দলকে গ্রামে গ্রামে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সেই সরকারের অধীনে তারাই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে, এটাই হবে আমাদের একমাত্র পথ। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো পথ নেই।

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন। সঞ্চালনা করেছেন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল। এছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।

এএইচআর/এসএম