বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে কুইক রেন্টাল ও বিদ্যুৎ খাতে বিশেষ আইন বাতিল করবে বলে জানিয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। 

শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।  

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনসহ এ সংক্রান্ত সব কালাকানুন বাতিল করা হবে। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন বন্ধ করা হবে। স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে।

চাহিদা অনুযায়ী পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উৎপাদন ও চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন অতিদ্রুত স্থাপন করা হবে। বাপেক্স ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দেশীয় খনিজ ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে দেশীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে সম্ভাবনাময় গ্যাস-পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ উত্তোলনে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে টেকসই ও নিরাপদ করতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভর জ্বালানিনীতি গ্রহণ করা হবে। বিশেষ জোর দেওয়া হবে জল-বিদ্যুৎ উৎপাদনে। খালেদা জিয়া প্রণীত বিএনপির ভিশন-২০৩০ তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ঘোষিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে বিদ্যুৎ খাতে যে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে জ্বালানি আমদানি সংকট বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার দেশের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির ব্যাপারে কাতার বা ওমানের সঙ্গে পুরো জ্বালানি চাহিদা মেটানের মতো দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি না করে অংশ বিশেষ সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্পট জ্বালানি বাজার থেকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সাত ডলারে যে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তা এখন স্পট মার্কেট থেকে ৩৮ ডলারে পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে ডলারের রিজার্ভে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে শীতকালে ৪-৫ মাস বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত ক্ষমতা স্ট্যান্ডবাই রাখতে হলে তা বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর গায়ে না দিয়ে সরকারি কেন্দ্রে রাখা গেলে অলস সময়ের জন্য কোনো মূল্য পরিশোধ করতে হতো না। প্রশ্ন হলো, সরকারতো ইচ্ছা করে বড় বড় সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে হয় অচল না হয় আধা সচল করে রেখেছে। অথচ বড় বড় সরকারি কেন্দ্রগুলোকে ওভারহলিং করে সচল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল বিএনপি। কিন্তু ২০০৯ এ ক্ষমতায় এসে প্রথম এক বছর ইচ্ছে করে সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিকে দুর্বিষহ করে তোলে যেন বিনা টেন্ডারে অধিক ব্যয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়। 

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ সংকট থাকলেও কুইক রেন্টালের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া কিংবা বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে দশগুণ বেশি দামে গ্যাস কেনার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ লুটেরা সরকারের অর্থের অভাব হয় না। কারণ এর একটা বিরাট অংশ যে তারাও পায়। বিদ্যুৎ খাত এখন সরকারের দুর্নীতি ও টাকা পাচারের প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সংকটকালে যেখানে দরকার ছিল প্রশাসন পরিচালন ব্যয়ে লাগাম টানা, বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জের মতো অপব্যয় বন্ধ করা, অপ্রয়োজনীয় রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি বাতিল করা। সেটি না করে সরকার জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে দিয়ে এখন জনগণের ওপর লোডশেডিং চাপিয়ে দিয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বিধায় এ অবৈধ সরকার জনকল্যাণের প্রতি কোন দায়দায়িত্বও বোধ করে না।

বিদ্যুৎ খাতের বিপর্যয়, রিজার্ভের সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাসের দায় নিয়ে বর্তমান অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানান মির্জা ফখরুল। বলেন, তা না হলে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনগণই এ সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জাবিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। 

এএইচআর/জেডএস