আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, বিএনপিকে সহযোগিতা করা ও তাদের জনসমাবেশ ভালো জায়গায় করার জন্য ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ৮ ও ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৬ তারিখে নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ, আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) চান বিএনপি জনসমাবেশ ভালোভাবে করুক।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাতে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন তিনি।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপির জনসমাবেশের কারণে ছাত্রলীগের সম্মেলন এগিয়ে নিয়ে আসা একটা নজিরবিহীন ঘটনা। তারা সোহরাওয়ার্দীতে চেয়েছিল, তারা সোহরাওয়ার্দীতে করবে, তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাদের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ ও ৯ ডিসেম্বর থেকে এগিয়ে আনা হয়েছে। যাতে পুরো মাঠ তাদের জন্য প্রস্তুত থাকে। তার মানে হচ্ছে— রাজনীতিতে শান্তি, সদিচ্ছার যে প্রবাহ এটা শেখ হাসিনা শুরু করলেন। বোঝাই যাচ্ছে তারা পল্টনে সমাবেশ করবে, তারা রাজনীতির যে শান্তি, সদিচ্ছার প্রবাহ গ্রহণ করতে ব্যর্থ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের (বিএনপির) উদ্দেশ্যটাই খারাপ। উদ্দেশ্যটা হলো— স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করা, নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে জ্বালাও পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, পেট্রল বোমা নিক্ষেপ, মানুষ পুড়িয়ে মারা। যে কাজগুলো আমরা অনেক আগে থেকে আশঙ্কা করেছিলাম। যে ঘটনাগুলো তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে ঘটিয়েছে। একই ভাবে তারা আবার শুরু করার পাঁয়তারা করছে। তাদের লক্ষ্য তো দেশের মানুষের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যাপারে যে লড়াই সেটা তো এদের (বিএনপি) লক্ষ্য না। এদের লক্ষ্য হলো দেশের মানুষের শান্তি দূর করে আতঙ্কিত করা, ভয়-ভীতি দেখানো, উল্টোপথে ক্ষমতায় যাওয়া।

আরও পড়ুন : ১০ ডিসেম্বর অনুমতি দিলেও সমাবেশ করব, না দিলেও করব : গয়েশ্বর

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তাদেরকে জনসভা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জন্য বলা হয়েছে, ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা ইজতেমা (তুরাগ) মাঠে করতে পারে। এখানে প্রায় ৫০ লাখ লোকের জমায়েত হয়। তারা পূর্বাঞ্চলের শিল্প বাণিজ্য মেলার মাঠে নিতে পারে। সেখানে ২০ লাখ লোক এনে দেখাইতে পারে যে জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য হলে সেখানে ২০ লাখ লোক এনে শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বলছে সহযোগিতা করবে, সরকার বলছে, প্রধানমন্ত্রী বলছে, আমরা বলছি, তোমরা জনসভা করো। কিন্তু তোমরা অগ্নিসন্ত্রাস করো না। যদি সেটা করার চেষ্টা করা হয় তাহলে আমরা কোনো প্রকার ছাড় দেব না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করব।

গত ১৫ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ওইদিন বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেছিলেন, সমাবেশের অনুমোদনের পাশাপাশি ১০ ডিসেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেওয়া, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেন কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সেসব বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারকে জানিয়েছি।

পরে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জন্য নয়াপল্টন নয়, শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হবে।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি চাননি। অনুমতি না দিলেও তারা ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা ১০ ডিসেম্বরের বিএনপির সমাবেশে বাধা দেবেন না। তবে আগুন ও লাঠি নিয়ে খেলতে এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

এমএসআই/এসএসএইচ/