ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই এলাকা (পল্টন) আমরা পরিপূর্ণ নিরাপদ মনে না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে যান চলাচল, জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে আটকাচ্ছি না। তবে এখানে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কোনো অবকাশ নেই। 

আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর দেড়টার দিকে পল্টন থানার সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

বিপ্লব কুমার বলেন, বিএনপির দলীয় কার্যালয়কে আমরা এখন আইনের ভাষায় বলছি, প্লেস অব অকারেন্স (পিও)। যে কারণে আমরা এটি কর্ডন করে রেখেছি। বিশেষজ্ঞ ব্যতীত, ক্রাইম সিনের লোকজন ব্যতীত কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশের কাজ শেষ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে কোনো কিছুই হতে দেওয়া হবে না। 

গতকাল বিকেলে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। এতে আসামি করা হয়েছে দুই হাজার জনকে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা (পুলিশ) গতকাল সতর্কতামূলক অবস্থানে ছিলাম। কাউকে মারধর, হামলা করার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু একপর্যায়ে যখন বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তা ব্লক করে অবস্থান নেয়, জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে ডিসি মতিঝিলসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা হয়। যখন পুলিশের ওপর হামলা হয় তখন জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে, বাধ্য হয়েছি অভিযান পরিচালনার জন্য। পুলিশের ওপরে হামলা হয়েছে, ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে, নাশকতার চেষ্টা হয়েছে, নাশকতার সব ধরনের উপকরণ এখানে আনা হয়েছিল। অভিযান চালিয়ে নাশকতার যাবতীয় উপাদান আমরা এখান থেকে জব্দ করেছি। 

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে নাশকতার উপাদান পাওয়া যায়, ককটেল পাওয়া যায়। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয় যে, এটা রাজনৈতিক কোনো সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে না। ককটেল রাখার জায়গা হিসেবেই আমরা এখন বিএনপি কার্যালয়কে ট্রিট করছি। আমাদের ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে।

বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয় ছাড়াও এখানে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অফিস, বাসা-বাড়ি রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা বিধান করা পুলিশের পবিত্র দায়িত্ব। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন পুলিশের পক্ষ থেকে তাই করা হবে। 

গতকালের ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন থেকে চারশ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।  

সকাল থেকেই থমথমে পরিস্থিতি নয়পল্টনে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

সমাবেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। যারা সমাবেশের আয়োজন করেছেন তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। জনসাধারণের চলাচল বিঘ্নিত হয় এমন কোনো স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেবে না ডিএমপি। 

মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকগুলো মামলার প্রক্রিয়া চলছে, বিস্ফোরক, নাশকতার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলাসহ অনেকগুলো ধারায় মামলা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের সেসব মামলায় আজই আদালতে পাঠানো হবে।  

এদিকে আজ সকাল থেকে নয়াপল্টনে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে চলছে তল্লাশি।  

পুলিশের সতর্ক অবস্থার মধ্যেও নাইটিঙ্গেল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

নাইটিঙ্গেল ও ফকিরাপুল মোড়ে ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করেছে পুলিশ। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয়দের প্রবেশ করতেও দেখাতে হচ্ছে পরিচয়পত্র। সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, বিপণীবিতান, অফিস ও ব্যাংক। 

পুলিশের সতর্ক অবস্থার মধ্যেও নাইটিঙ্গেল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই করো’, ‘পুলিশের বাধা, মানি না মানব না’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, জিয়ার সৈনিক জেগেছে’ এসব স্লোগান দিতে শোনা যায় নেতাকর্মীদের। 

জেইউ/এনএফ