গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ভালো করে পড়ে আসতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘আপনারা পদযাত্রা করেন, আপনারা সমাবেশ করেন, কত নাটক করছেন? কী করেন? আপনাদের লক্ষ্যটা কী? কোন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। আপনারা বলেন গণতন্ত্র নাই, গণতন্ত্র উদ্ধার জন্য? গণতন্ত্র কোথায় গেছে? প্রতিদিন আপনারা সভা, সমাবেশ করছেন, মিছিল করছেন, প্রতিদিন টেলিভিশনে মিথ্যাচার করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা বিষোদগার করছেন। তারপরও বলেন গণতন্ত্র নাই। গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা কী? আপনি সেটা ভালো করে পড়ে আসুন। তারপর গণতন্ত্রের কথা বলেন।’

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রতিবাদে কৃষক লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এসব কথা বলেন মাহবুবউল আলম হানিফ। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শান্তি সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘ঢাকা শহরকে একটি আধুনিক শহর করার জন্য, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করার জন্য মেট্রোরেল চালু হয়েছে। আজ পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক মাইলফলকে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা সবসময় বলেছি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা মানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়া। দেশের উন্নয়ন হওয়া। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হওয়া। সেটা বার বার প্রমাণ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ বিএনপি ও জামায়াত, যারা সবসময় সরকারবিরোধী মিথ্যাচার ও সমালোচনা করে, যারা এ দেশের উন্নয়ন দেখতে পারে না বা চোখে দেখে না। আমি এর আগে বহুবার বলেছি, তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করা মানে উন্নয়নের বিরোধিতা করা, কারণ, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সরকার। সেই সরকারের বিরোধিতা করা মানে দেশের উন্নয়নের বিরোধিতা করা, দেশে অগ্রগতির বিরোধিতা করা। আপনারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যখন ছিলেন একটা উদাহরণ দিতে পারবেন যে এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে আপনারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে পেরে ছিলেন।’

হানিফ বলেন, ‘আপনারা এই বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন? আজ যারা তরুণ প্রজন্ম, যাদের বয়স ২০ বছর, যাদের অনেকের হয়তো ১৫ বছরের আগের কথা মনে নেই। কারণ ১৫ বছর আগে সে ছিল ৫ বছরের শিশু। তারা ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির তাণ্ডব দেখেনি। তাদের দুঃশাসন দেখেনি, তারা দেশকে কীভাবে ধ্বংস করেছিল দেখেনি। এই বাংলাদেশকে কীভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল সেটা দেখেনি। আজ যেমন লন্ডনে বসে বিএনপির কলকাঠি নাড়ছেন, ঠিক ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে হাওয়া ভবনে বসে বিএনপির কলকাঠি নাড়েন তারেক রহমান। দুর্নীতি ছাড়া আর মানুষকে হত্যা ছাড়া বিএনপির অর্জন কী? মির্জা ফখরুলকে আহ্বান জানাই, বলেন আপনাদের এই দুইটা ছাড়া কী আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষকে বিভ্রান্তি করে, ষড়যন্ত্র করে কত দিন রাখবেন? আপনারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন, জনপ্রিয়তা নিয়ে কথা বলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষের দিকে কিংবা ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। আসুন সেই নির্বাচনে আপনারা অংশ নিন। অংশ নিয়ে প্রমাণ করুন, আপনাদের জনপ্রিয়তা।’

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতা আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘গতকাল ৬টি আসনে উপ-নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনে এই নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করেছে যে তাদের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। তারা করতে সক্ষম, সেটা প্রমাণ করেছে। এর আগে গাইবান্ধা নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি হয়েছে, সেজন্য নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছে। তাদের এই পদক্ষেপকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখিনি, সমর্থন করিনি। তারপরও নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নির্বাচন বাতিল করেছেন, তাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে আপনাদের সমস্যা কোথায়? যে ইস্যু বাতিল হয়ে গেছে সেই ইস্যু আবার হবে না।’

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘সন্ত্রাস, নৈরাজ্য বহুবার করেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতেও করেছেন, বিরোধী দলে থাকতেও করছেন। বিএনপি-জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার আপনাদের সেই আন্দোলন জনগণ দেখেছে। আন্দোলনের নামে সহিংসতা দেখেছে। বিদ্যুৎ দিতে পারেননি কিন্তু আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বিদ্যুৎকে ক্ষতি করেছেন। আর যদি আন্দোলনের নামে সহিংসতা করেন জনগণ বরদাস্ত করবে না।

কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান। সমাবেশ পরিচালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

এমএসআই/এসএসএইচ/