প্রশাসন, ব্যবসা, উদ্যোক্তা কিংবা খেলাধুলা; দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে গেলেও রাজনীতিতে রয়েছেন পিছিয়ে। বিশেষ করে দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীরা একপ্রকার উপেক্ষিত। কোনো কোনো দলে এক-দুজন নারীনেত্রী থাকলেও তাদের প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায় না। জাতীয় সংসদ কিংবা স্থানীয় সরকার, কোনো নির্বাচনেও দলগুলো নারীদের প্রার্থী করে না। তবে দলগুলোর নেতাদের দাবি, নারীনেত্রীরা পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করেন। এই কারণে মাঠের রাজনীতি কিংবা কর্মসূচিতে তাদের দেখা যায় না।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ করার বাধ্যবাধকতার মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে (২০২০ সাল)। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলই এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। কিন্তু এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করছে। কোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করেনি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন আরপিও খসড়ায় নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ করার বিষয়টি সময় বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে রাজনৈতিক দলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, এটি কত সাল পর্যন্ত করা হয়েছে আমার মনে নেই। অনেক আগের বিষয় তো, এখন মনে নেই।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অনুযায়ী আটটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর বাইরে মাজার কেন্দ্রিক দুটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। যদিও নিবন্ধনের বাইরে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক বেশি।

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো হলো- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিশ।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে ধীরে-ধীরে ধর্মভিত্তিক দলগুলোতে নারীদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এসব দলের নারী নেত্রীরা অন্যান্য দলগুলোর মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন না। তারা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও অংশগ্রহণ করেন না। দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের মতামতও গ্রহণ করা হয় না। মূলত নির্বাচন কমিশনের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা জমা দিতে হয় বলেই নিজেদের স্ত্রী ও আত্মীয়দের নাম সদস্য হিসেবে দেখানো হয়। যাতে নিবন্ধন সংক্রান্ত কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের হিসেবে এগিয়ে আছে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। দলটির নেতারা বলছেন, তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পুরুষ ৪৯ জন। নারীদের জন্য ২৪টি সদস্য খালি রাখা হয়েছে। এখনও নারী নেত্রীদের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্তমানে কতজন নারী আছে তার সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি তারা।

দলটির মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ সেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৪৯ জন পুরুষ রয়েছে। নারীদের জন্য ২৪টি সদস্য পদ খালি রয়েছে। আস্তে-আস্তে নারীদের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইউনুস আহম্মেদ সেখ বলেন, আমাদের নারীরা তো পর্দাশীল। তাই তারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয় না। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও তারা অংশ নেয় না। আসলে এখনও নারীদের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে অনলাইনে মিটিংয়ে যুক্ত হয়ে মতামত দিতে পারবে কি না, সেটি তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে একজন মাত্র নারীনেত্রী রয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও দলটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ দাবি করেন, সেটি এখন একাধিক হয়েছে। এখন দলের একাধিক নারীনেত্রী রয়েছেন।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মনে করি নারীরা যোগ্যতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে। দলে নারীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া ঠিক হবে না।

নির্বাচন কমিশনে ‘খেলাফত মজলিশ’ নামের দুটি দল রয়েছে। জানা গেছে, মাওলানা ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিশ কেন্দ্রীয় কমিটি ১০০ সদস্যের কাছাকাছি। দলটিতে ১৫ জনের মতো নারী সদস্য রয়েছে বলে তাদের দাবি। কমিটিতে নারীদের সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে নারী বিষয়ক সম্পাদক। এই পদে আছেন দলের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদেরের স্ত্রী নাসরিন কাদের।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ১০০ সদস্যের কাছাকাছি। কমিটিতে নারী বিষয়ক ও সহকারী নারী বিষয়ক সম্পাদক পোস্ট রয়েছে। এছাড়া ১০-১২ জন্য নারী সদস্য রয়েছেন। তারা পর্দাশীল বলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন না। পর্দার আড়ালে থেকে তারা কাজ করেন।

বাংলাদেশের পুরানো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দলে ভাঙন ধরে। বর্তমানে একই নামে দুটি দল রয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (কাসেমী) মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ঢাকা পোস্টকে জানান, ২০৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ জনের মতো নারী রয়েছেন। দলের নারীদের সর্বোচ্চ পোস্ট মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

নারীনেত্রীরা কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন না কেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো তাদের প্রতিনিধি। আমাদের ওপর তাদের ভরসা আছে, তাই কর্মসূচিতে অংশ নেন না।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, গত মাসে দলের কাউন্সিল হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০০ সদস্যের ওপরে। কমিটিতে ১৫ জনের মতো নারী রয়েছেন। আমার কাছে সঠিক হিসাবে না থাকলেও দলের মহাসচিবের কাছে আছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন কোনো নারীনেত্রী নেই। যদিও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দলটির নেতা মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ।

মাওলানা মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল নূরপুরী নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনজন নারীনেত্রী রয়েছেন বলে জানা গেছে। দলটির মহাসচিব মামুনুল হক হেফাজতের বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন। দলটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ধর্মভিত্তিক দলগুলো বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও নেতৃত্ব পিছিয়ে আছেন তারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র দুটি দলের শীর্ষ দুই পদে নারী নেতৃত্ব রয়েছে। তারমধ্যেও দুই নারীনেত্রী বর্তমানে নানাবিধ কারণে রাজনীতি নিষ্ক্রয় হয়ে আছেন। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলে নারীদের জায়গা করে নেওয়া কতটা সহজ।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে শীর্ষ দুই পদে নারী আছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আমিনা আহমেদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি বেগম জুবেদা কাদের চৌধুরী। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র তিন মাস নামকাওয়াস্তে রাজনীতিতে ছিলেন জুবেদা কাদের। এরপর তিনি পদ ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।

আমিনা আহমেদ বর্তমানে রাজনীতিতে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়, নামমাত্র পদে আছেন। শুধু জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার সক্রিয় আছেন রাজনীতিতে। এছাড়া নানাবিধ কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে থেকে দূরে আছেন।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব আবুল খায়ের ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনি (জুবেদা কাদের) মাত্র তিন মাসের জন্য রাজনীতিতে এসেছিলেন। এখন তিনি আমাদের সভাপতি নেই। এটি আমরা নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীনেত্রী রয়েছেন ২০ জন। বিএনপির ৫০২ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটিতে নারী নেতৃত্বে রয়েছেন ৬৭ জন। সেই হিসাবে বিএনপিতে নারী নেতৃত্ব রয়েছে মাত্র ১৩.৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীনেত্রী রয়েছেন ৩০ জনের মতো। যদিও দলটির দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, তাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৪০ জনের মতো নারীনেত্রী রয়েছেন।

গত কয়েক বছরের সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরাসরি ভোটে নারী নির্বাচিত হওয়ার হার ওঠা-নামার মধ্যে রয়েছে। দেখা গেছে, ২০১৮ সালেই সরাসরি ভোটে সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থী সংসদ সদস্য হয়েছেন। ওই নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৯ জন, যা সংসদ নির্বাচনের সর্বোচ্চ নারী প্রার্থী। তারমধ্যে ২২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। আর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮ জন নারী প্রার্থী ছিল। তারমধ্যে ১৮ জন জয়ী হন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৫৭ জন নারী প্রার্থী ছিল। তারমধ্যে জয়লাভ করেন ১৯ জন।

নারীনেত্রীরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার এবং সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নারী হলেও কোনো অদৃশ্য কারণে নারীরা বারবার রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে। একজন নারীর তার পুরুষ সহকর্মীরা সমান যোগ্যতা থাকার পরও অনেক সময় তিনি নেতৃত্বে আসতে পারেন না। তাকে তার পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় দ্বিগুণ কাজ করে প্রমাণ করতে হয় তিনি যোগ্য। নারীর প্রকৃত ক্ষমতায় করতে হলেও সরাসরি ভোটে নারীদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নারীদের অবস্থান ভালো। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, সংসদেরে স্পিকার নারী। গার্মেন্টস সেক্টরে নারীরা দেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও নারীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র তিনটি দলের শীর্ষপর্যায়ে নারী নেতৃত্ব রয়েছে, এটিকে কীভাবে দেখছেন— জানতে চাইলে শাম্মী আহমেদ বলেন, আসলে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ধীরে-ধীরে বাড়ছে। তবে, নিবন্ধিত এই রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে কতটা নারী নেতৃত্ব রয়েছে, সেটাও দেখার বিষয় আছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে হলে আমাদের নারী-পুরুষ উভয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যে যার অবস্থান থেকে নারীদের সম্মান দিতে পারলে, তার অধিকার দিতে পারলে নারীদের উন্নয়ন সম্ভব।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত দিনগুলোতে রাজনীতিতে নারীরা শূন্যের কোঠায় ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে। সর্বক্ষেত্রে নারীরা এগিয়েছে। এখন অনেক চিকিৎসক, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার নারী। তারপরও বলব, কোথাও যেন নারীদের ছোট করে রাখা হচ্ছে। নারীকে সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি করা নারীদের জন্য একেবারে সহজ কাজ নয়। এখানে তাদের পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকলেও সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। সেটা বোঝা যায় এতগুলো রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র তিনটি দলের শীর্ষ দুই পদে নারীনেত্রী রয়েছেন!

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ভাষা আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে নারীদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পুরুষদের চাইতে নারীর অবদানও কম ছিল না। দেশের উচ্চ পর্যায়ে নারীরা রয়েছেন। এমপি-মন্ত্রী, সচিব পর্যায়েও তারা আছেন। বিগত কয়েক দশক ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রীও নারী। বিরোধীদলীয় নেতাও নারী। কিন্তু তারপরও কথা থাকে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সচেতনভাবে নারীদের জায়গা করে না দিলে তারা কাজ করবে কীভাবে? ৪০ বছর পর একজন নারী পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে। ভোটের সময় একজন নারী যেভাবে ঘুরে-ঘুরে ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে একজন পুরুষ সেটা পারে না। তারপরও রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীরা আটকে যাচ্ছে। সেখানে তার মূল্যায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। যে কোনো দলের ক্ষেত্রে এটা দেখা যাচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন এটা। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।

যোগ্যতা থাকার পরও একজন নারীকে রাজনীতিতে দ্বিগুণ কাজ করে প্রমাণ করতে হচ্ছে— উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোকে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে পুরুষের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী সদস্যদের সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে আনতে হবে।’

‘সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোটা আছে। কিন্তু তার জন্য বরাদ্দ কম। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় পুরুষ সংসদ সদস্যের মতো সরকারি বরাদ্দ পান না। তার জনপ্রিয়তা আছে, কাজ করার যোগ্যতা আছে, তারপরও বরাদ্দ কম। এই জায়গাগুলোতে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমাজ তথা দেশের অনেক ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে গেলেও রাজনীতিতে তারা এগোতে পারেননি। আমরা রাজনীতিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করি, তবে সেটা অলংকার হিসেবে। আমাদের সংসদে যে ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে নারীদের জন্য, সেখানে নির্বাচিত হতে কোনো যোগ্যতা লাগে না। এখানে নির্বাচিত করার আগে চাওয়া হয় কে কার স্ত্রী, কে কার শ্যালিকা— এসব বিষয়।

“অনেক সময় অর্থের লেনদেনের কথাও আমরা শুনেছি। এদের কোনো ক্ষমতাও থাকে না। এগুলো কি নারী ক্ষমতা? নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ‘সংরক্ষিত’ পদ্ধতিটা হলো বড় অন্তরায়।”

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদ্ধতি চালু করা হয়। তখন অনেক নারী উৎসাহিত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু তারা নির্বাচিত হয়ে দেখল তাদের কোনো ক্ষমতাবান চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। তাদের ক্ষমতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে তাদের চেয়ারও ঠিক মতো থাকে না।

‘সংরক্ষিত পদ্ধতি নারীদের এগিয়ে যাওয়া ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এটা না থাকলে দক্ষ ও যোগ্য নারীরা অনেক দূরে যেতে পারতেন। পুরুষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তারাও এগিয়ে যেতে চান।’

এএইচআর/এসএম