বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাতে দেশের গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে। সেই নিহত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

রোববার (১৯ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে এক হোটেলে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ‌‘কর্তৃত্ববাদের উত্থান ও বিপন্ন গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে জিয়া পরিষদ নামের একটি সংগঠন।

আরো পড়ুন>>দেশকে নতুনভাবে পরিচালনায় সংস্কার প্রয়োজন : মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। এর কারণ হচ্ছে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৎকালীন যারা নেতৃত্বে ছিলেন, আজকের আওয়ামী লীগ তা নস্যাৎ করে দিয়ে একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করেছিল ৭৫ সালে। আর এখন দ্বিতীয়বারের মতো ছদ্মবেশে (বাকশাল) নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। এদের হাতে গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমাদের ১০ দফায় পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, বর্তমান সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। কারণ এ সংসদ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কীভাবে নির্বাচন হয়েছে সেটা সবাই জানে। সব দলের রাজনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষিতে একটি কেয়ারটেকার সরকার নির্বাচন করতে হবে। তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশন নতুন করে নির্বাচন ব্যবস্থা করবে। এর মধ্যে দিয়ে নতুন সংসদ এবং নতুন সরকার গঠন হবে।

আরো পড়ুন>>বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে চুক্তি দেশবিরোধী : মির্জা ফখরুল

আজকের দেশের এই সংকট উত্তরণে শুধু বিএনপির একার দায়িত্ব নয় বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সব রাজনৈতিক দলের, দেশের সব  মানুষের দায়িত্ব। আমাদের সবার দায়িত্ব হচ্ছে দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রকে বাঁচানো। সর্বোপরি একটি মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।  

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, যেটা ধ্বংস করেনি দাবি করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, আজকে দেশে কোনো আইনের শাসন নেই। পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে বিনা ওয়ারেন্টে, বিনা মামলায় তুলে নিয়ে গিয়ে, একই কায়দায় নাশকতা, বিস্ফোরণ মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখায়। মামলায় ১০০ জনের নাম দেয়, ওই এলাকায় যারা বিএনপি নেতাকর্মী। আর বাকি ১ হাজার আসামি দেয় অজ্ঞাতনামা। পঞ্চগড়ে দিয়েছে ১৬ শতজন অজ্ঞাতনামা। এতে দুটি কাজ হয়, ওই এলাকার মানুষগুলো ঘরছাড়া হয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায়। আরেকটি হলো বিরাট গ্রেপ্তার বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। যারা ভুক্তভোগী তারাই এটা ভালো করে জানে।

আরো পড়ুন>>নির্বাচন-নির্বাচন খেলার ফাঁদে দেশের জনগণ আর পা দেবে না

তিনি আরো বলেন, আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, এটা কি চিন্তা করা যায়? কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে একটি দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়? এটাকে কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় বলে প্রশ্ন তার।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এখন একটা কর্তৃত্ববাদী শাসনের দেশ। দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা বলে কিছু নাই। মাঝে মাঝে অনেকেই প্রশ্ন করেন, আপনারা (বিএনপি) কি নির্বাচনে আসবেন না? আপনারা নাকি ৮০ সিট নিয়ে আলোচনা করছেন, পাচ্ছেন?। আচ্ছা বলেন তো, সিট (আসন) দেওয়ার মালিক কে? দেশের জনগণ ছাড়া কি কেউ এর মালিক? জনগণ ছাড়া তো কাউকে দেখি না।

আরো পড়ুন>>আমাদের লড়াই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয় : মির্জা ফখরুল

যেসব লোক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকে রেখেছে, তাদের সরকার পক্ষ থেকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন খসরু। তিনি বলেন, দেশ থেকে ১০ লাখ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।

জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক মো. এমতাজ হোসেন সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড দিলারা চৌধুরী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুম, জিয়া পরিষদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর এম সলিমুল্লাহ খান প্রমুখ।

এএইচআর/এমএ