দেশে পৌঁছেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মরদেহ। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার মরদেহ পৌঁছায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দলটির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সন্ধ্যা ৬টায় মওদুদ আহমদের মরদেহ বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এখান থেকে মরদেহ তার গুলশানের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর এভারকেয়ার হাসপাতালের হিমঘরে মরদেহ রাখা হবে।

জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে মওদুদ আহমদের মরদেহ গুলশানের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে মওদুদের মরদেহ বহনকারী গাড়িটি তার গুলশানের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

বিএনপির এ নেতার মরদেহ গ্রহণ করতে বিমানবন্দরে আসেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. জাহিদ হেসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটি সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, বজলুল করিম চৌধুরীর আবেদ, ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে বিএনপি হয়ে মেয়র পদে লড়া তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণ সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে লড়া ইশরাক হোসেন প্রমুখ।

মওদুদ আহমদকে দেখতে বিমানবন্দরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিড়/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

এর আগে, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, শুক্রবার (১৯ মার্চ) মরহুমের মরদেহ সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সেখান থেকে নেওয়া হবে মওদুদের জন্মস্থান নোয়াখালীতে। দুপুর আড়াইটায় নোয়াখালীর কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরও জানান, বিকেল ৪টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে চতুর্থ জানাজা এবং সাড়ে ৫টায় মরহুমের নিজ বাড়ির (মানিকপুর কোম্পানিগঞ্জ) সামনে পঞ্চম জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।

মওদুদ আহমদের জানাজায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও ধর্মপ্রাণ সকলকে অংশগ্রহণ করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানান টিপু।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মওদুদ আহমেদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

মওদুদ আহমদের মরদেহবাহী গাড়ি/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

একনজরে মওদুদ আহমদ

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে সম্মান পাস করে ব্রিটেনের লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশোনা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহূত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন।

১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী-৬ আসন) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেবার তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬-তে তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন।

৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাঁচবার মওদুদ আহমদ নোয়াখালী-৫ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও জিয়াউর রহমানকে বিএনপি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন মওদুদ আহমদ। দলটির তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মওদুদ আহমদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সংগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

তিনি সর্বশেষ ২০০৯ সালে খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।

২০১৫ সালে মওদুদ আহমেদের একমাত্র ছেলে আমান মমতাজ মওদুদ মারা যান। আর মওদুদ আহমদের একমাত্র মেয়ে বর্তমানে নরওয়েতে থাকেন।

এএইচআর/এফআর