সিরাজুল আলম খান বাঙালি জাতীয়তাবাদের বাতিঘর
সিরাজুল আলম খান বাঙালি জাতীয়তাবাদের বাতিঘর। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র দর্শন আবিষ্কার করেছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সিরাজুল আলম খানকে বাদ দিয়ে ভাবা যায় না, রচনা করা যায় না। সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় আলোচকরা এসব কথা বলেন। সিরাজুল আলম খান স্মরণ সভা জাতীয় কমিটি এ সভার আয়োজন করে।
বিজ্ঞাপন
স্মরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আ স ম আবদুর রব বলেন, সিরাজুল আলম খানকে বোঝা, জানা, চেনা অসম্ভব। অন্যদের কাছে বলতেন, আমি যা করতে পারি না, বলতে পারি না সেটা রবকে দিয়ে বলাই, করাই। সিরাজুল আলম খানের মৃত্যু নেই। তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত না করা পর্যন্ত আমার মৃত্যু নেই।
আ স ম আবদুর রব বলেন, ১৯৬১ সালে ২১ বছর বয়সে নিউক্লিয়াস করেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য। তখন বাংলাদেশ শব্দটাও কারো কাছে শুনিনি। সিরাজুল আলম খানের জন্ম না হলে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার জন্য রাজি করাতেন কে? লক্ষ লক্ষ কর্মী তৈরি করেছিলেন। সিরাজুল আলম খান আমাদের জাতীয়তাবাদের বাতিঘর। যিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র দর্শন আবিষ্কার করেছেন।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, সিরাজুল আলম খান কখনও শেখ মুজিবুর রহমানকে অস্বীকার করেননি, অনাস্থা জানাননি। বঙ্গবন্ধুর হাতে সিরাজ ভাই দেশটা তুলে দিয়েছিলেন, দেশটাকে কোন দিকে নিয়ে যাবেন সেই মাঠটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। সিরাজুল আলম খান ও তাজউদ্দীন আহমেদ হলেন বাংলাদেশের ফাউন্ডিং ফাদার।
শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, আজকে আমরা ক্রান্তিলগ্নে আছি। ৫০ বছর পরও আমরা একটা নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা তৈরি করার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। সকল রাজনীতিবিদদের উচিত রাজনীতিবিদদের মর্যাদা দিয়ে কথা বলা। বঙ্গবন্ধু রাজনীতিবিদদের সম্মান দিতেন।
শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষকে নির্বাচনের বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। জাতি সমাধান চায়। এতদিন ধরে যারা লুটপাট করে যারা বিত্ত বৈভব করেছে তা দিয়ে আমাদের কোনো লাভ নেই।
স্মরণসভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অসাধারণ প্রতিভাবান সংগঠক ছিলেন সিরাজুল ইসলাম খান। স্বাধীনতার পুরো অংশজুড়ে ইতিহাস রচিত হয়নি। সেই ইতিহাসের কথা যখন আসবে তখন তাকে বাদ দিয়ে করা যাবে না। আজ যদি রাজনীতিবিদরা সিরাজুল আলম খানের মতো নির্মোহ হতে পারত তাহলে বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত।
বিপ্লবীর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ষাটের দশকে যারা পর্দার অন্তরালে থেকে জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন সিরাজুল আলম খান অন্যতম। প্রচলিত রাজনীতির যে ধারণা, রাজনৈতিকদের যে চরিত্র দাদা ছিলেন তার ব্যতিক্রম। বঙ্গবন্ধুর পর যদি মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে নাম নিতে হয় তাহলে সিরাজুল আলম খানের নাম নিতে হয়। সিরাজুল আলম খানকে যে দল, সরকার শ্রদ্ধা জানাতে পারে না তারা কীসের মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে? এটা তাদের হীনমন্যতা। তরুণ সমাজকে তিনি যেভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন এটা একটা অসাধারণ কর্ম। দাদার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার তরুণ প্রজন্ম রাখবে। প্রচলিত সংবিধানের বাইরে গিয়ে শ্রমজীবী মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ পরাধীনতা ভাঙার জন্য আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন দাদা।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সিরাজুল আলম খানকে বাদ দিয়ে ভাবা যায় না, রচনা করা যায় না। সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। নতুন প্রজন্মের কাছে সিরাজুল আলম খানের সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার চিন্তা তুলে ধরাই আমাদের কাজ। তাহলেই আমরা তার প্রতি সম্মান জানাতে পারব।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সশস্ত্র যুদ্ধের অন্যতম কারিগর ছিলেন সিরাজুল আলম খান। সশস্ত্র যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর কাছে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। তা না হওয়ায় ১৫ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। ১৫ দফা দাবি অগ্রাহ্য হওয়ার কারণে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেন। তিনি ইতিহাসের নির্মাতা।
নাজমুল হক প্রধান বলেন, আমরা যারা সিরাজুল আলম খানের কর্মময় জীবনের ইতিবাচক দিক ধরে জাতিকে সামনের দিকে পথ দেখাই।
স্মরণ সভার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জাতীয় কমিটির সদস্য করিম সিকদার, তোহা মুরাদ, মঞ্জুর আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন, খালেকুজ্জামান লিপন, তানসেন, তৌফিকুজ্জামান পীরাচা প্রমুখ।
স্মরণ সভা শুরুর আগে সিরাজুল আলম খানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, সদস্য বাদল খান, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মোহন রায়হান।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রওশন জাহান সাথী, ফরহাদ মজহার, সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
এআর/এসকেডি