মামুনুল হক

রাজধানীর অদূরে সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্ট কাণ্ডে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের ‘দ্বিতীয় স্ত্রীর’ ইস্যুটি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়েছে। জাতীয় সংসদ থেকে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান সব জায়গায় মুখ্য আলোচনায় মামুনুল ও তার স্ত্রী। শুরুতে এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেও সামলে উঠতে পারেননি তিনি। ফলে অনেকটা আড়ালে চলে গেছেন হেফাজতের প্রভাবশালী এ নেতা।

হেফাজতের নেতারা বলছেন, ৩ এপ্রিল হঠাৎ করে মামুনুল হকের ‘দ্বিতীয় স্ত্রীর’ বিষয়টি সামনে এলে হতভম্ব হয়ে পড়েন সংগঠনটির নেতারা। কারণ তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি সংগঠনের কেউই জানতেন না। এ নিয়ে সারাদেশে সংগঠনের নেতাকর্মীরাও কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়েন। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে মামুনুল হকও ফেসবুক লাইভে এসে নিজের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে ব্যাখ্যা দেন।

তারা বলছেন, যদিও সেই ব্যাখ্যা হেফাজতের শীর্ষনেতাদের কাছে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হয়নি। কিন্তু সংগঠনের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে মামুনুল হকের ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ কাণ্ডে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না নেতারা। বরং প্রকাশ্যে মামুনুলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। কারণ বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতায় কর্মসূচি পালন করে হেফাজত। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চাপের মধ্যে আছে সংগঠনটি। এখন এ কাণ্ডে সংগঠনে বিরোধ দেখা দিলে সরকার আরও বেশি চেপে ধরবে। তাই দৃশ্যমান কিছু দেখা না গেলেও ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ কাণ্ডে সংগঠনের মধ্যে চাপেই আছেন মামুনুল হক। তা সামলে উঠতে না পেরে অনেকটা আড়ালে রয়েছেন তিনি। তবে আপাতত এ ইস্যুটি তার পদবিতে আঘাত করবে না।

হেফাজতের একটি সূত্র বলছে, ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ কাণ্ডে মামুনুল হকের প্রতি সংগঠনের নেতাকর্মীদের আস্থা কমে গেছে। কারণ তার দ্বিতীয় বিয়ে কবে, কখন ও কীভাবে হয়েছে- এটা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয় নেতাকর্মীদের কাছে। আর বিষয়টি বুঝতে পেরে মামুনুল হকও ফেসবুকে লাইভে এসে বারবার ‘আল্লাহর কসম’ বলে নেতাকর্মীদের আস্থা আনার চেষ্টা করেছেন। এতে তৃণমূলের সহজ-সরল হেফাজতের অনুসারীরা আশ্বস্ত হলেও সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিপাকে পড়বেন মামুনুল। পাশাপাশি আগে মামুনুল হকের প্রতি সাধারণ মানুষের যে অন্ধবিশ্বাস ছিল সেটিও এখন কমে আসবে। সবমিলিয়ে বড় ধরনের একটি ‘ইমেজ সংকটে’ পড়েছেন হেফাজতের এ নেতা। এটি কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না তার পক্ষে।

হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রয়েল রিসোর্ট কাণ্ডে মামুনুল হকের প্রতি সাধারণ মানুষের কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে। সেটা সরকারের লোক ও কিছু মিডিয়া (সংবাদমাধ্যম) তৈরি করছে। তবে সেটা শিগগিরই কেটে যাবে। সংগঠন ও নেতাকর্মীদের মধ্যে তার অবস্থান আগের মতোই আছে। কারণ গতকাল আমাদের হেফাজতের জরুরি বৈঠক হয়েছিল, সেখানে মামুনুল হক তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। শরিয়ত সম্মতভাবেই (ধর্ম অনুসরণ করে) তিনি বিয়ে করেছেন। ফলে সংগঠনের মধ্যে তার প্রতি আস্থার কোনো সংকট তৈরি হয়নি।’

তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি হেফাজতের আরেক নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী। একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে মামুনুল হকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, ‘মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের সন্তানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে শিশুটি বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। ফলে তার দ্বিতীয় বিয়ে আইন বা ইসলাম সম্মত দাবি করা হলেও সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে তার প্রতি কিছুটা অনাস্থা তৈরি হয়েছে।’

হেফাজতের নেতারা বলেছেন, দুই কারণে মামুনুল হকের প্রতি নেতাকর্মীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। প্রথমটি হলো ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ কাণ্ড। অন্যটি হলো- ২৬ থেকে ২৮ মার্চ সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে সারাদেশে হেফাজতের ১৮ জনের মতো নেতাকর্মী মারা গেছেন। এছাড়া অনেক নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে মামুনুল হকের মতো দায়িত্বশীল নেতা নেতাকর্মীদের পাশে না দাঁড়িয়ে অবকাশ যাপনে যাওয়া কতটুকু যুক্তিসম্মত, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন ‘স্থানীয়রা’। তখন সঙ্গে থাকা নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু বিপত্তি বাধে নাম নিয়ে। মামুনুল স্ত্রীর নাম আমেনা তাইয়্যেবা বললেও ওই নারী জান্নাত আরা ঝর্না বলে নিজের নাম উল্লেখ করেন।

যদিও পরবর্তী সময়ে জানা যায়, মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রীর নাম আমেনা তাইয়্যেবা। কিন্তু কবে, কীভাবে, কখন তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে এ বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট কোনো কথা এখনও বলেননি মামুনুল হক।

মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বায়তুল মোকাররমে তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার (৫ এপ্রিল) রাত পৌনে ১০টায় আরিফ-উজ-জামান নামে ওয়ারীর এক ব্যক্তি হত্যা চেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনসহ কয়েকটি ধারায় মামলাটি করেন। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলা করার সময় আরিফের সঙ্গে থানায় উপস্থিত ছিলেন এম আর মিঠু ও ইমরান হোসেন তপু নামে আরও দুই ব্যবসায়ী।

এএইচআর/এফআর