‘নির্বাচনী ইশতেহারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা গুরুত্ব দেওয়া হবে’
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রথম সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিগত সময়ের ইশতেহার মূল্যায়ন করে আগামী নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহার তৈরি করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী আওয়ামী লীগমনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন সেসব সুশীলদের প্রয়োজনে ডাকা হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে, কথা হবে, তাদের মতামত ও সুপারিশ নেওয়া হবে। এছাড়া মিডিয়ার ব্যক্তিদের কাছ থেকেও ইশতেহার করতে বিভিন্ন সুপারিশ নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সব কিছুর ঊর্ধ্বে আমরা তিনটা বিষয়কে গুরুত্ব দেব, কৃষিখাত, সেবা খাত, অর্থনৈতিক ও শিল্প উৎপাদন খাত। এই তিনটি খাতই আওয়ামী লীগের ইশতেহার গুরুত্ব পাবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য, কৃষি উন্নয়নের জন্য কৃষির গুরুত্ব কমছে না। কৃষির ওপর যে গুরুত্ব সেটা অব্যাহত থাকবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল কৃষি হবে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়। খাদ্য বৃদ্ধি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আমরা কমিয়ে আনব। বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে কিছু মানুষের সমস্যা হচ্ছে এটা আমরা স্বীকার করি। তবে এখন খাদ্যের দাম নিম্নমুখী। দেশের ৭০ থেকে ৭৪ শতাংশ খরচ হয় খাদ্য অর্থাৎ চালের ক্ষেত্রে। সেই চালের দাম বর্তমানে বাংলাদেশের নিম্নমুখী। বর্তমানে সরকারের খাদ্য গুদামে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টন চাল মজুত আছে, যা কোনোদিনই ছিল না। এই মুহূর্তে দেশের মিল মালিকেরা সরকারকে চাল দিতে চায়, তার মানে হচ্ছে কম দামে চাল কিনে সরকারকে তারা দিতে চায়। যখন চালের দাম বেশি থাকে তখন মিলাররা সরকারকে চাল দিতে চায় না। ডিমের দাম, তেলের দাম, সবজির দাম কিছুটা বেশি হলেও চালের দাম কম তাই মিলের মালিক আমাদেরকে চাল দিতে চায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, বর্তমান সরকারের যে লক্ষ্য ছিল কৃষিতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, সেই লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। ২০০৮ সালের সবজি উৎপাদন ছিল তিন মিলিয়ন টন, বর্তমানে ২০ কোটি ২০ লাখ টন উৎপাদন হয়। বর্তমানে ৭ গুণ বেশি সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে সব সুযোগ-সুবিধা এবং গুরুত্ব অব্যাহত থাকবে।
আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে শিল্প ও উৎপাদন খাত। ছোট শিল্পকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ভারী শিল্পর দিকে আমাদের নজর বাড়াতে হবে। এই তিনটি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক জোন করেছেন। ইকোনমিক জোন গুরুত্ব দিয়ে অবকাঠামো সব সুযোগ-সুবিধা এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যাতে সহজেই একজন উদ্যোক্তা শিল্প কারখানা স্থাপন করে দ্রুত সফল হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সুশাসন, গণতন্ত্র আমাদের জাতীয় সংসদ হবে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহার প্রণয়ন করা হচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তাদের স্বাধীনতা ও রক্ষার জন্য ভূমিকা থাকবে। সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্বাচনী ইশতেহারে এই তিনটি বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দেব।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক আরও বলেন, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের অধিকার বিষয়টি ইশতেহারে গুরুত্ব পাবে। এমনকি তৃতীয় লিঙ্গ মানুষদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি ইশতেহারে গুরুত্ব পাবে। সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে। দেশের সব মানুষকে সমান গুরুত্ব দিয়ে আগামী দিনে সরকার দেশ পরিচালনা করবে সেই বিষয়টি ইশতেহারে তুলে ধরা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে ডিরেক্ট সংযুক্ত হয়ে কাজ করবেন বলেও জানান সরকারের থাকা এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, অতীতের মতো আওয়ামী লীগ এমন একটি ইশতেহার তৈরি করতে চায় যা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে সবার কাছে প্রশংসনীয় হবে। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের সহায়ক হবে।
ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ, ড. সাত্তার মন্ডল, ড. বজলুল হক খন্দকার, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. শামসুল আলম, ডা. দীপু মনিপি, ড. হাছান মাহমুদ, অ্যাডভোকেট শম রেজাউল করিম, শেখর দত্ত, ড. মাকসুদ কামাল, ড. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক খায়রুল হোসেন, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সাজ্জাদুল হাসান, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ওয়াসিকা আয়েশা খান, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত, অ্যাডভোকেট সায়েম খান, সাদিকুর রহমান চৌধুরী, সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।
এমএসআই/জেডএস