গত বছর বামজোটের কর্মসূচিতে লাঠিপেটা করে পুলিশ

আজ ৩০ ডিসেম্বর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বছরপূর্তি। ২০১৮ সালের এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট বিশাল জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। 

আলোচিত-সমালোচিত এ নির্বাচনের দিনটিকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে। আর বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস নামে দিনটি পালন করে। আর বাম গণতান্ত্রিক জোট দিনটিকে কালো দিবস বলে আখ্যা দেয়। 

দিনটিকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোট। কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা আছে বোম জোটেরও। করোনা মহামারির মধ্যেও রাজনৈতিক এ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিরুত্তাপ রাজনৈতিক ময়দানে কিছুটা উত্তাপ এনে দিয়েছে।  

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল, ফলে সে বিবেচনায় ২০১৮ সালের এই জাতীয় নির্বাচনের একটা ভিন্ন মাত্রা ছিল। আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে এই নির্বাচন অগ্রাধিকার পায় কারণ এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের বিজয় দিবস
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালনে কর্মসূচি নিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পক্ষে ব্যালটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে নৌকা প্রতীকে গণ রায় প্রদান করে। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, ১৫ আগস্ট, জেলহত্যা ও ২১ আগস্টের খুনি এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দেশের জনগণ।

নেতারা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ইতিহাসে একটি বিজয়ের মাইলফলক। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তি, দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের আস্ফালন আর সহিংস রাজনীতির অন্ধকার ছায়া কাটিয়ে গণতন্ত্রের নবতর অভিযাত্রায় অগ্রসর হয় বাংলাদেশ। তাই দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করেন তারা। আর তাই দেশব্যাপী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর দুটি স্থানে পৃথক কর্মসূচি পালন করা হবে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে থাকবে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগেও আলোচনা সভা থাকবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আমরা গণতন্ত্রের বিজয়ের উৎসব উদযাপন করবো। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিএনপির মতো একটা সন্ত্রাসী রাজনৈতিক অপশক্তির জ্বালাও-পোড়াও দাবানলের মুখেও বাংলাদেশের মানুষ যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে সমন্নত রেখেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশ যে গণতান্ত্রিক ধারায় সাংবিধানিক ধারায় পরিচালিত হচ্ছে এই লক্ষে আমরা এই দিবসটি গণতন্ত্রের উত্তোরণ, সমৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিজয়ের জন্য দিনটিকে আমরা পালন করছি।

তিনি বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক অপশক্তি বিএনপি নামক এই দলটি নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য তথাকথিত গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে চাই। জনগণই তাদের অপকর্মের সমুচিত জবাব দেবে। আর কর্মসূচির নামে কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করি।

গতবছর দেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানাসহ দলের সব শাখার উদ্যোগে বিজয় মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ছিল দলটির।    

কী অভিযোগ নির্বাচন নিয়ে 
২০১৮ সালের এই নির্বাচন নিয়ে বহু অভিযোগ রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে- 
• আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল 
• আওয়ামী লীগ বা তাদের জোটের প্রার্থীর সমর্থকদের নিয়ন্ত্রিত ভোটকেন্দ্র 

ভোট শুরুর পর ঘণ্টা দুয়েক যেতে না যেতেই অনেক এলাকা থেকে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়া শুরু করেন।

বিএনপির গণতন্ত্র হত্যা দিবস
গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনে কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপিও। গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন সম্পর্কে বিএনপির বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আগের রাতেই জনগণের ভোটাধিকারকে হত্যা করেছে। তাই বিএনপি এই দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করবে।

৩০ ডিসেম্বর কর্মসূচি সম্পর্কে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘ঢাকাসহ সারাদেশে আমরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের কার্মসূচি নিয়েছি৷ একাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল ও পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ঢাকাসহ প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।'

আওয়ামী লীগ ৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করবে- এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু এদেশের মানুষ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ জানে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর রাতে কী হয়েছে? আওয়ামী লীগ সমস্ত ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে তা বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার।

আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় হয়৷ একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে৷ দেড়শরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস করে, যা ছিল নজীরবিহীন৷ এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে আগের রাতে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি করে। তাই আমরা ৩০ ডিসেম্বরকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করি৷’

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আর দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা গত সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

ফিরে দেখা : নির্বাচনের ফলাফল
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা এই নির্বাচনে ২৮৮টি আসন পেয়েছিল, আর বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট মাত্র সাতটি। বাকি তিনটি আসন পেয়েছিলেন অন্যান্যরা। 

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বাইরে অন্য কেউ ভোট পাননি, অনেক কেন্দ্রে এমন ফলও দেখা গেছে।

বাম জোটের কালো দিবস 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তির দিনটিকতে মাঠে থাকছে বাম জোটও। দিনটিকে কালো দিবস আখ্যা দিয়ে মাঠে থাকবে এ জোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ মিছিল করবে বাম গণতান্ত্রিক জোটে। 

জোটের সাবেক সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীকাল বাম জোট কালো দিবস পালন করবে। পুরোনা পল্টন সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকার বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। আর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরাবর কলো পতাকা বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।

গতবছরও একই ধরনের কর্মসূচি দিয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা মিছিল থেকে দুই দফায় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে লাঠপেটা করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। 

এইউএ/এএইচআর/এনএফ