বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যার ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের শাস্তি দাবি
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ ও আহত শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয় খরচে সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একই সঙ্গে শ্রমিক হত্যার দায়ে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি বাতিলের দাবি জানায় সংগঠনটি।
রোববার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের বকেয়া বেতনসহ ন্যায়সঙ্গত ১০ দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়। সেখানে বিনা উসকানিতে মালিকের নির্দেশে পুলিশ, আনসার, সিকিউরিটি ও সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন নিহত ও অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তারা বলেন, শ্রমিকদের দাবি ছিল মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, রমজানে বিকেল ৫টার মধ্যে ছুটি দেওয়া ও ইফতারের বরাদ্দ দেওয়া ইত্যাদি। যা অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের শুরুতেও ফসলি জমি অধিগ্রহণ করার বিরুদ্ধে স্থানীয় অধিবাসীরা বিক্ষোভ করলে ২০১৬ সালেও গুলি করে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল। ঐ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। সেই হত্যার বিচার হলে পুনরায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত নাও হতে পারত।
তারা আরও বলেন, এস আলম গ্রুপ শ্রমিকের পাওনা দিতে পারে না, অথচ দানবীর সেজে পটিয়া উপজেলায় ৮৫ মসজিদে ২০ কোটি টাকা ও ৩০ মাদরাসায় ১০ কোটি টাকা দান করে বাহবা কুড়িয়েছে। এই লুটেরা গ্রুপ রাষ্ট্র ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সাতটি বেসরকারি ব্যাংক ও কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল দখল করেছে। পুঁজিবাদী শোষণমূলক রাষ্ট্রে শ্রমিকদের শোষণ করেই মালিক শ্রেণি ফুলে ফেঁপে ওঠে। আর রাষ্ট্র, সরকার তাদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা দাবি জানিয়ে বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক হত্যায় দায়ী মালিক কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, আনসার, সিকিউরিটি গার্ডদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাওনা পরিশোধ না করে গুলি করে শ্রমিকদের হত্যার দায়ে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি বাতিল করতে হবে। নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহত শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয় খরচে চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে। লকডাউন চলাকালে শ্রমজীবী হতদরিদ্র সবার এক মাসের খাদ্য, নগদ পাঁচ হাজার টাকা এবং বিনামূল্যে করোনা টেস্ট, চিকিৎসা ও টিকা দিতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবি নেতা সাজেদুল হক রুবেল, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুইয়া, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের তৈমুর খন্দকার অপু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা আমেনা বেগম, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব থেকে তোপখানা রোড হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এমএইচএন/ওএফ