দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিএনপিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। আর এজন্য করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে নতুন কর্মসূচি পালনে প্রস্তুতি নেওয়ার মত দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যানরা। 

বুধবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তারা এমন মত দেন। 

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, বিএনপির ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের মতামত চান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তখন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন ভাইস চেয়ারম্যানরা। তারা বলেন, দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক কোনো পরিবেশ নেই। কেউ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছে না। 

ভাইস চেয়ারম্যানরা বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিএনপিকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু এখন করোনার কারণে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত আছে। ফলে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হবে। সেসব কর্মসূচি পালনে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আর এসব আন্দোলনে অপরাপর সব বিরোধীদলগুলোকে এক প্লাটফর্মে এনে রাস্তায় নামতে হবে। এছাড়া বৈঠকে হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। 

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনীতি করতে হলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এরপর আন্দোলন করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, এই সরকার যেহেতু কোনো গণতান্ত্রিক পথে নেই, তাই তাদেরকে গণতান্ত্রিক পথে আনতে হলে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করতে হলে আমাদের আন্দোলনের বিকল্প নেই। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বৈঠকে চলমান হেফাজত নেতাদের গণগ্রেফতারের বিষয়ে আলোচনা হয়। সরকার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণহারে হেফাজতের নেতাদের পাশাপাশি বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। কিন্তু গণমাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি সঠিকভাবে উঠে আসছে না। গণমাধ্যম স্বাধীন নয় বলে এ রকম ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, বৈঠকে অধিকাংশ ভাইস চেয়ারম্যান মতামত দিয়েছে যে, বর্তমান সরকার বিরোধীদলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রাম রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে প্রশাসন দিয়ে করছে। এ অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও একটি মিনিমাম জায়গায় ঐক্যে এনে রাস্তায় নামতে হবে। তাহলেই আন্দোলনের সফলতা আসবে। তবে এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।   

জানা গেছে, বৈঠকের ভাইস চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে আসা মতামতগুলো নোট করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স। পরবর্তীতে বিএনপির যে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে এই মতামতগুলো নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অতিমারি করোনা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান উপস্থিত ছিলেন। 

ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও শওকত মাহমুদ।

এএইচআর/আরএইচ/জেএস