বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস

আগামীকাল শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে বৈঠকে (ভার্চুয়াল) বসছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের। যিনি সম্প্রতি দলের নিখোঁজ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে কারণ ব্যাখ্যার চিঠি পেয়েছেন। বৈঠকে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নিজের বক্তব্য তুলে ধরবেন মির্জা আব্বাস।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, শনিবার বিকেল ৩টায় লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র, ড. আব্দুল মইন খান, নজরুল ইসলাম, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিম রহমানের।

এ বৈঠকে অংশ নেবেন কি-না, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের কাছে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সময় হলে জানতে পারবেন। আমি এখন কিছু বলতে চাই না।’

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ‘ইলিয়াস আলীর গুমের পেছনে সরকার নয়, বিএনপির কিছু বদমাশ নেতা জড়িত’- মির্জা আব্বাসের এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) তাকে দলের পক্ষে থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে চিঠিতে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। শনিবার তিন দিন শেষ হতে যাচ্ছে। তাই কালকের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মির্জা আব্বাস চিঠির ব্যাখ্যার বিষয়ে কী জবাব দেন সেটাই দেখার বিষয়। তবে তিনি (মির্জা আব্বাস) নিজ থেকে বৈঠকে এই বিষয়ে কথা বলতে না চাইলে, অন্য কোনো তার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইবেন না। এদিকে, চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তার জবাব কী হতে যাচ্ছে, সেটিই এখন দলের নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাদের মধ্যে একজন বলে নিজেকে মনে করেন মির্জা আব্বাস। তার মতো একজন সিনিয়র নেতাকে এইভাবে চিঠি দেওয়া হবে, তা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। দলের পক্ষে থেকে চিঠি পেয়ে মর্মাহত হয়েছেন মির্জা আব্বাস।’

এই নেতা আরও বলেন, ‘গতকাল চিঠি পাওয়ার পর মির্জা আব্বাস আমাকে বলেন, এভাবে আমাকে চিঠি না দিলেও পারতেন। কারণ আগামীকাল শনিবার যেহেতু দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে, সেখানে বক্তব্যের বিষয়ে আমার কাছে জানতে চাইতে পারত। তখন আমি আমার বক্তব্যের ব্যাখা দিতে পারতাম।’

ইলিয়াস আলীকে নিয়ে মির্জা আব্বাসের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য, তিন ভাইস চেয়ারম্যান ও দুজন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সাত নেতার সঙ্গে আলোচনা হয়। তাদের দাবি, দেশের এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ মির্জা আব্বাসের এমন বক্তব্য তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে বিশ্লেষণ করছে বিএনপি। এক, ১৭ এপ্রিল যে আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস এই বক্তব্য দিয়েছেন সেটা ছিল ভার্চুয়াল তথা অনলাইনে। তিনি হয়তো জানতেন না যে, এখানে গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা যুক্ত আছেন। তাই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এই বক্তব্য দিয়ে ফেলেছেন।

দুই, তার অনেক বয়স হয়েছে এবং একাধিক মামলার আসামি। এই বয়সে কেউ কারাগারে যাওয়ার মানসিকতা থাকার কথা নয়। আবার ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েও সরকারের অনেক রোষানলে আছেন তিনি। তাই সরকারের পক্ষে থেকে হয়তো কোনো চাপ বা আপসের প্রস্তাব পেয়ে দলের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে এই বক্তব্য দিয়েছেন। তৃতীয়, দীর্ঘদিন বিএনপি ক্ষমতায় নেই। তাই হতাশ হয়ে তিনি নিজে থেকে সরকারকে খুশি করতে এই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তিন নম্বর কারণটি খুব বেশি যুক্তিযুক্ত নয়।

মির্জা আব্বাসকে দেওয়া চিঠি টাইপের সঙ্গে যুক্ত এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনার এই বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির কাছে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। এটা যে বিএনপির অফিসিয়াল বক্তব্য নয়, একান্তই আপনার (মির্জা আব্বাস) বক্তব্য- এ জন্যই চিঠি দেওয়া হয়েছে। কেন আপনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন? এর ব্যাখা জানতে চেয়ে দল থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন আপনার বক্তব্যের ব্যাখা পেলে সেটি আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে জানানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মির্জা আব্বাসকে ধীরস্থির হয়ে ভালো করে ভেবে চিঠির জবাব লিখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে তার বক্তব্যে দলগত নয়, নিজের ব্যক্তিগত। সেটা যেন বোঝা যায়।’

বিএনপির অপর একটি সূত্র বলছে, ইলিয়াস আলীর গুমের পেছনে সরকার নয়, ভারত জড়িত। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে, ভারত সরকার বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদকে এখনও ফেরত পাঠায়নি- চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এমনই বক্তব্যই দিতে পারেন মির্জা আব্বাস।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মেলনী, ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর গুমের পেছনে আমাদের দলের যে বদমাশগুলো রয়েছে তাদেরকেও চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেন প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন। ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিলেন তাকে। সেই বিষধর সাপগুলো এখনও আমাদের দলে রয়ে গেছে। যদি এদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করতে না পারি, সামনে যাওয়া যাবে না।’

অবশ্য পরেরদিন রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সুর পাল্টিয়ে রাজধানীর শাহজাহানপুরে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কাটপিস করে ইচ্ছেমতো আমার বক্তব্যকে ব্যবহার করা হয়েছে। কী কারণে করা হয়েছে আমি জানি না। এমন কোনো কথা বলিনি, যার জন্য আমাকে বিব্রত হতে হবে। সরকার বা আওয়ামী লীগ ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি- এমন কথা আমি বলিনি। আমার কথা বিকৃত করে লেখা হয়েছে।’

এএইচআর/এফআর