খালেদা জিয়া

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাসপাতালের ভর্তির খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা। আর তাই তো তারা তাদের নেত্রীর খোঁজ নিতে একে পর এক ফোনকল দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ব্যক্তিগত নম্বরে।

আর কেন্দ্রীয় নেতারাও চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীদের জানাচ্ছেন, খালেদা জিয়া করোনা থেকে শঙ্কামুক্ত। অন্যান্য রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, গতকাল বুধবার (২৭ এপ্রিল) অনেক রাতে জানা গেছে খালেদা জিয়ার হাসপাতালের ভর্তির খবর। হাসপাতালের ভর্তির খবরে সারাদেশের বিএনপির নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাই নেত্রীর খোঁজ নিতে বৃহস্পতিবার সারাদিনই ফোনকল আসছে জেলা, মহানগর, উপজেলা ও ইউনিয়উনের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। 

নেতাকর্মীদের প্রত্যেকেরই জিজ্ঞাসা, খালেদা জিয়া কেমন আছেন? কেন ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে? এখন তার শারীরিক অবস্থা কেমন? তাদেরকে কেন্দ্র থেকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তিনি ভালো আছেন। তার করোনা আক্রান্তের ২০ দিন পার হয়ে গেছে, ফলে আর কোনো ভয় নেই।

দলটির নেতারা আরও বলেন, গত কয়েক বছর কারাগারে থাকার কারণে খালেদা জিয়ার শরীরে অন্যান্য যে রোগ ছিল, সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। তাই এখন করোনার কারণে তাকে যেহেতু হাসপাতালে নেওয়া লাগছে, ফলে একসঙ্গে সেসব রোগের পরীক্ষাগুলোও করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্বিগ্ন না হয়ে নেত্রীর সুস্থতায় জন্য দোয়া আয়োজন, দান-সাদকা করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে নেতাকর্মীদের।

বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের একের পর এক ফোনকল আসছে। সবাই জানতে চাচ্ছেন দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা কী। কেন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে? আমরাও তাদেরকে ম্যাডামের ডাক্তারদের বরাত দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছি যে, ম্যাডাম ভালো আছেন। তিনি করোনার শঙ্কামুক্ত। তার অবস্থা স্থিতিশীল আছেন বলেও জানিয়েছে ডাক্তাররা।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স 

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে ম্যাডামকে কারাগারে নেওয়া হলে তার কোনো চিকিৎসা বা পরীক্ষা করানো হয়নি। আর বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরীক্ষায় আমরা বিশ্বাস করি না। তাই শুরু থেকে আমরা বিশেষায়িত হাসপাতালে ম্যাডামের চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি। এখন যেহেতু করোনা আক্রান্তের কারণে তাতে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার ভয় নেই, তাই অন্যান্য রোগের পরীক্ষা জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হবে। বিষয়গুলো আমরা নেতাকর্মীদের বুঝিয়ে দিচ্ছি। একইসঙ্গে সারাদেশের নেতাকর্মীদের উদ্বিগ্ন না হতে খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দোয়া করতেও আহ্বান জানান এমরান সালেহ প্রিন্স। 

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কার্ডিওলজিস্ট ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে তার দেখাশোনা করার জন্য আছেন গৃহকর্মী ফাতেমা এবং ব্যক্তিগত আরেকজন নারী স্টাফ।

এর আগে গত শনিবার খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসার কথা জানিয়ে তার চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী গণমাধ্যমে বলেন, তার আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।

গত ১৫ এপ্রিল রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান করা হয়। তারপর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলেন, সিটি স্ক্যানে খালেদা জিয়ার ফুসফুসে খুবই সামান্য সংক্রমণ হয়েছে। যা সত্যিকার অর্থে মাইল্ড পর্যায়েও পড়ে না। তাই খালেদা জিয়ার আগের ওষুধের সঙ্গে নতুন ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিক যুক্ত করা হয়। 

এর আগে গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তার বাসভবন ফিরোজার আরও আটজন ব্যক্তিগত স্টাফও আক্রান্ত হন। বর্তমানে তিনিসহ চারজন করোনা আক্রান্ত আছেন।

এএইচআর/আরএইচ