বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটূক্তি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি আঘাত, বাংলার স্বাধীনতার ওপর আঘাত বাংলার দামাল ছেলেরা কোনোদিন বরদাশত করবে না : তাপস

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরীদের আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যরিস্টার ফজলে নূর তাপস।

শাপলা চত্বরের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাবুনগরীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটূক্তি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি আঘাত, বাংলার স্বাধীনতার ওপর আঘাত বাংলার দামাল ছেলেরা কোনোদিন বরদাশত করবে না।

সুতরাং আপনারা নিবৃত হবেন এবং এই দেশ একটি শান্তির নীড় হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেই কাতারে আপনারা আসবেন, আর না হলে আপনারা যে স্লোগান এক সময় দিয়েছিলেন, বাংলা হবে আফগান সেই আফগানিস্তানে আপনাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে ব্যারিস্টার তাপস এ হুঁশিয়ারি দেন।

ফজলে নূর তাপস বলেন, বাবুনগরী, আপনারা ভুলে গেছেন। মনে করেছেন একটি ভাস্কর্য ভাঙলেই বুঝি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা শান্তিপ্রিয়, আমরা সুন্দরভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলার জন্য নিয়োজিত আছি। কিন্তু তার মানে এই না যে আপনারা পানি ঘোলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, জাতির পিতার চেতনায় আঘাত করে আবার সেই জঙ্গিবাদে এই দেশকে নিয়ে যাবেন। সেই বাংলা ভাই সৃষ্টি করবেন, সেই যুদ্ধাপরাধীদের আরেকবার ক্ষমতায় বসাবেন। সেই সুযোগ আর বাংলার মাটিতে আমরা হতে দেব না।

বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটূক্তি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি আঘাত, বাংলার স্বাধীনতার ওপর আঘাত বাংলার দামাল ছেলেরা কোনোদিন বরদাশত করবে না

ফজলে নূর তাপস

তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলার বুক থেকে সকল মৌলবাদ নিশ্চিহ্ন হবে। সকল মৌলবাদকে আমরা নিশ্চিহ্ন করে দেব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকল প্রগতিশীল শক্তি আবার ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আজকের এই মানববন্ধনে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারী উস্কানিদাতা ও ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা যারা পঁচাত্তরে চেষ্টা করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে। তারা চেষ্টা করেছিল পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বাংলাদেশকে মুছে দিতে। তারা সেদিন সফল হয়নি। আজকেও তারা সফল হবে না।

এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে আঘাত করছে। তাই তারা আমাদের সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদকে সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করছে। আমাদের সংবিধানের ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতির অবমাননা প্রদর্শিত হলে সেটা হবে দেশদ্রোহীতার সামিল।

হঠাৎ যেভাবে আলোচনায় বাবুনগরী 
ঢাকার ধূপখোলা এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল এবং সংগঠন সমাবেশ করে সাম্প্রতিক সময়ে। হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি সংগঠনের নেতারা ভাস্কর্য-বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এ জন্য জুনায়েদ, মামুনুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও রয়েছে। জুনায়েদ বাবুনগরী এক বক্তব্যে বলেছেন, কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য স্থাপন করে, সর্বপ্রথম আমি আমার আব্বার ভাস্কর্যকে ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ভাস্কর্যবিরোধী কয়েকটি দল। যার জেরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে ইসলামপন্থী দলগুলোর টানাপোড়েন চলছে। এরইমধ্যে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনা সবকিছু ধরা পড়ে স্থানীয় সিসিটিভি ক্যামেরায়।

তারা এই দেশকে ভালোবাসে না। তারা এই দেশের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না। তাই তারা এসব অন্যায়-অপকর্ম করছে। আমরা সোচ্চারভাবে বলতে চাই যারা এই ধরনের অন্যায়-অবিচার করবে, দেশদ্রোহিতা করবে, সম্পৃক্ত হবে তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। তাদের প্রত্যেককে আমরা বিচারের সম্মুখীন করবো।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম এম মুনীর, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ, ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, লায়েকুজ্জামান মোল্লা, মোখলেছুর রহমান বাদল, সাবেক এমপি সানজিদা খানম বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী অংশ নেন।

এমএইচডি/এনএফ