গুলশান বিএনপির চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন

সরকারের অদূরদর্শিতা ও লুটপাটনীতির কারণেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংক্রান্ত’ কমিটির আহ্বায়ক দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

‍তিনি বলেন, সরকারকে অনতিবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, মূল্য, সংরক্ষণ এবং বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশান বিএনপির চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মোশাররফ দাবি করেন, ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে সরকার একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। অথচ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারকরা এ ভ্যাকসিন থেকে কোনও ধরনের রয়েলিটি নিচ্ছে না।

সরকার প্রথম থেকেই ভ্যাকসিন ক্রয় করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, যদি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্বেই যথাযথভাবে অগ্রিম টাকা অথবা ট্রায়ালের সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে স্বল্পমূল্যে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে পারতো। কিন্তু এখনও সরকার ভ্যাকসিন ক্রয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদি সরকার সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে ক্রয় করতো তাহলে অর্ধেক মূল্যে পেতো। শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে লাভবান করতেই এই ধরনের চুক্তি করা হয়েছে।

ভ্যাকসিন সংগ্রহে শুধুমাত্র একটি দেশ-স্বার্থান্বেষী মহলকে খুশি রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, আগেই অনেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশ ভ্যাকসিন ট্রায়াল এবং পরবর্তীতে স্বল্পমূল্যে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সরকার সেটি গ্রহণ করেনি। যদি একাধিক প্রস্তাব গ্রহণ করা হতো, তাহলে আজ ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতো না।

ভ্যাকসিন বিতরণে সরকারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন মানার আহ্বান জানিয়ে সাবেক এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে তাদেরকে বঞ্চিত করা যাবে না। দেশের ৬০ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীসহ সম্মুখ সারির করোনা যোদ্ধারা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

করোনা আক্রান্ত ঝুঁকিতে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন পেতে সরকার ন্যুনতম ব্যবস্থা নিতে পারেনি দাবি করে তিনি আরও বলেন, সরকারের কোভিড-১৯ এর সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতি জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অধিদপ্তরের ডিজি এবং পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তার পদত্যাগ ও লোক দেখানো বদলি করেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী আগের জায়গাতেই বহাল আছেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন- বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের জি-টু-জি চুক্তি হয়েছে। আর বেক্সিমকো বলছে- সরকারের সঙ্গে নয়, চুক্তি হয়েছে বেক্সিমকোর সঙ্গে বাণিজ্যিক। ফলে ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারে মন্ত্রীদের বক্তব্য জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। যদিও গতকাল টিকা ক্রয়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সেখানে রাখা হয়েছে বিশাল দুর্নীতির খাত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. ফরাদ হালিম ডোনার ও চেয়ারপারসনের মিডিয়া উংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

এএইচআর/এমএইচএস