মানুষের দৃষ্টি ভিন্নখাতে সরিয়ে নিতে সরকার নতুন কিছু নিয়ে সবসময় হাজির হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, 'এখন খুব লাফালাফি হচ্ছে। পরীমণি কে? আমরা কি বুঝি না? আবার সেই ডাইভারশন। আবার সেই অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া। যখন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য, মুক্তি, দেশের গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে কথা হচ্ছে, করোনা যখন বাড়ছে তখন আবার এ ধরনের একটা নিয়ে হাজির হচ্ছে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব।'

বুধবার (১৬ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'পরিমণির এই ঘটনা কতটুকু সত্য বা মিথ্যা, জানি না। এটা দেখে মনে হয়েছে সবকিছুই এ দেশে সম্ভব। মামলা করলো একটা, কিন্তু আরেক অপরাধের দায় দিয়ে গ্রেফতার করে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হলো। এটা আমি বুঝতে পারিনি। মামলা করল ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা, কিন্তু রিমান্ডে নেওয়া হলো মাদকের জন্য। যেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে, সেই বাড়িটাও তার না। এগুলো বোধগম্য না। তাহলে কি ক্ষমতাসীনরা যা চাইবেন তা–ই হবে? প্রশাসন কি এইভাবে তুলে নিয়ে সম্মান, পরিবারের কাছে সম্মান সবকিছু ধুলিসাৎ করে দেবে?'

‘গাছের ফাঁক থেকে গুলি হওয়ার আশঙ্কায় গাছ কেটেছিলেন জিয়া’—তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের যে তথ্যমন্ত্রী আছেন, তার কাজ হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য সৃষ্টি করা। আজ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কথা শুনিনি। জিয়াউর রহমান সিঙ্গাপুর, সৌদিতে গাছ লাগিয়েছেন। দেশে সবুজায়ন ও খাল খনন কর্মসূচি করেছিলেন।’

‘বিএনপির সঙ্গে একসঙ্গে বাস করা যায় না’– ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এ বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের আসল চরিত্র বেরিয়ে গেল। তারা কোনো বিরোধী দল চায় না। বিএনপি কারও দয়ার দল না। কারও দয়ায় বিএনপি টেকে না। বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে টিকে রয়েছে। বর্তমানে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তার জন্য আওয়ামী লীগের একদিন বিচার হবে।'

১৬ জুনকে বাংলাদেশের কলঙ্কময় দিন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে সেদিন প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয়বার এখন চলছে। আওয়ামী লীগের রসায়নের সঙ্গে গণতন্ত্র যায় না।

সংগ্রামের সম্পাদক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে আটক রাখা এবং প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হেনস্তা প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে, মেরে ফেলা হচ্ছে। দেশে যারা আছেন, তারা লিখতে পারেন না। কারণ জীবন ও জীবিকার ভয় আছে সবার। কোনো জাতি নিজে না জেগে উঠলে, তারা মুক্তি অর্জন করতে পারে না। এ জায়গায় বড় করে ভাবতে হবে। তরুণ যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র মুক্ত না হলে কারও নিরাপত্তা নেই। খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা দাবি করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, আবদুল হাই শিকদার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ইনকিলাব সম্পাদক রেজোয়ান সিদ্দিকী প্রমুখ।

এমএইচএন/এসএম