জুলাই আন্দোলনের পরে ছাত্রদের কোটায় সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যাওয়া তিনজন ছাত্র উপদেষ্টা মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।

তিনি বলেন, তাদের বেসিক দায়িত্ব ছিল যারা জুলাই গণহত্যা সংগঠিত করেছে তাদের বিচারটা নিশ্চিত করা। আহত পঙ্গুত্ব বরণকারীদের সেবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সংস্কার কার্যক্রম নিশ্চিত করা। অথচ তারা ভুলে গেছেন কোন রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে তারা সেখানে গেছেন। 

তারা যখন দায়িত্বে থাকবে না তখন জনগণ পাই টু পাই হিসাব নেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) হলরুমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা ও গুম ভুক্তভোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আহত, পঙ্গুত্ব বরণকারী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সেমিনারে ছাত্রশিবির সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ছাত্র উপদেষ্টারা সরকারে গিয়ে মূল দায়িত্ব ভুলে রুটিন ওয়ার্ক কাজে জড়িয়েছেন। নিজেদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চূড়ান্ত করার জন্য রাজনীতি করার মানসিকতা উচ্চাবিলাসিতা তাদের দায়িত্ব থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে সরিয়ে রেখেছে। তারা ভুলে গেছে কোন যোগ্যতায় তারা ওখানে গিয়েছে। তারা সেখানে গিয়েছে কোন যোগ্যতায় নির্বাচন করছে। 

সাদ্দাম বলেন, আমি মনে করি ছাত্র উপদেষ্টারা দায়িত্ব পালনে শতভাগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা যখন এই দায়িত্বে আর থাকবে না তখন জনগণ পাই টু পাই হিসাবগুলো তাদের কাছ থেকে বুঝে নেবে। জনগণ তখন বুঝতে পারবে ছাত্র উপদেষ্টাদের অবস্থা আগে কেমন ছিল আর পরে কেমন হয়েছে, কীভাবে থাকতো আর এখন কীভাবে থাকে। কোন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আমরা আশা করি বাংলাদেশটা পরিবর্তন হবে, দুর্নীতিমুক্ত হবে দেশ হবে।

স্বাধীনতার পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে গণহত্যা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত করা হয়েছিল উল্লেখ করে শিবির সেক্রেটারি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরেই গণবাহিনী বা রক্ষীবাহিনী গঠন করে হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এখানে ১৯৭৪ সালে একটা দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে যেভাবে বাংলাদেশকে রিকনস্ট্রাকশন করার দরকার ছিল সেখান থেকে বের হয়ে গিয়ে লুটপাট করা, মানুষকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা, মানুষকে তার মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, ব্যাংক লুটপট করা। এরপরে ক্ষমতাসীন যারা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ছিল ক্ষমতা বাকশাল কায়েম করে নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রাখা। এমন একটা অবস্থা পরিস্থিতি সেখানে তৈরি করা হয়েছিল।

ছাত্র সংগঠন হিসেবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ইসলামী ছাত্রশিবির উপরে চালানো হয়েছে উল্লেখ করে সাদ্দাম বলেন, ৩১ শতাংশ গুমের ঘটনায় ভুক্তভোগী একক ছাত্র সংগঠন হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবির। গত ১৫ বছরে নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ২৫৪ জনকে গুম করা হয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ২৫ শতাংশ।

মিডিয়া ট্রায়াল, নানা ধরনের ইসলামোফোবিয়া তৈরি করে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করে নির্বিচার ও হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। বাসা থেকে পড়ার টেবিল থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে সামনে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করা হয়েছে। রিমান্ডের নামে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত জুলাই আন্দোলনে আমাদের কয়েকশ ভাই শাহাদাত বরণ করেছে। তার আগ পর্যন্ত ১০৩ জন ভাইকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে, ৮৮ জন ভাইকে শুধুমাত্র ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গুম করে আয়নাঘরে বন্দি রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। এখনো শিবিরের ৭ জন ভাই গুম অবস্থায় রয়েছে। আমরা তাদের অবস্থান জানি না, তারা আসলে কোথায় আছে কী অবস্থায় আছে। 

জেইউ/এসএম