দেশের ‘জেনজি’ তথা ছাত্র ও যুব নাগরিকদের উদ্দেশ্য করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন এক লড়াকু সেনাপতি। তেমনিভাবে বাংলাদেশের জন্য তোমাদের দাঁড়াতে হবে, বলতে হবে আমিই হাদি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে ‘হ্যালো আওয়ার লিডার’ শীর্ষক সরাসরি মতবিনিময় ও প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্র, তরুণ ও যুবকদের অংশগ্রহণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জামায়াত আমির বলেন, বয়স মাত্র ২২। কিন্তু সামান্য বাধা দেখে পেছনে দৌড়ে যায়, নিজের জায়গায় স্থির থাকতে পারে না– সে হলো আসল বৃদ্ধ। ওই ২২ বছর বয়সের কারণে সে যুবক হবে না। আমরা সেই তারুণ্যের বাংলাদেশ চাই।

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইনসাফের লক্ষ্যে, শোষক ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দ্রোহ এবং মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল তার প্রধান টার্গেট। কিন্তু কেউই সেখান থেকে রেহাই পাননি। আমরা দফায় দফায় তার প্রতিবাদ করেছি, প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছি, আন্দোলন করেছি। কিন্তু ফ্যাসিজমের অবসান আমরা ঘটাতে পারিনি। এখানেও যুবসমাজ জুলাইয়ের সূচনায় যে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল একটি দাবিকে কেন্দ্র করে— কোটা সংস্কারের দাবি— এটাকেও গায়ের জোরে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। যুবসমাজ ফুঁসে উঠেছিল। রাত-দিন মানে নাই, ঘরের সাথে কোনো সংযোগ রাখে নাই। আর সেই যুদ্ধে যুবসমাজকে মা-বাবা এগিয়ে দিয়ে বলেছিল, যাও জাতির জন্য তোমাকে উপহার দিয়ে দিলাম। সেই মা-বাবাকে জানাই স্যালুট।

তিনি শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা ও মাথা নত না করা শিক্ষার্থীদের প্রতি স্যালুট জানান।

জামায়াত আমির বলেন, সর্বশেষ শহীদ হিসেবে অনন্য নজরানা পেশ করেছেন শরিফ ওসমান হাদি। তার অপরাধ কী? সে ছিল আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন এক লড়াকু সেনাপতি। আর উত্তাল দিনগুলোতে সে যুবসমাজের সাথে একদম পানির মতো মিশে গিয়েছিল। তার কণ্ঠ অনেককে উজ্জীবিত করেছে। যারা মানুষের অধিকার মানুষের কাছে ফিরে যাক এটা চায় না, বাংলাদেশ সম্মানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক, এটা যারা বরদাশত করতে পারে নাই, তারাই দুনিয়া থেকে তাকে বিদায় করে দিয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হাদিকে বিদায় করে লাভ হয়নি। হাদি বেঁচে থাকলে অবশ্যই এ জাতির জন্য ভালো কিছু করত, এটা আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু হাদি এই বয়সে এভাবে বিদায় নিয়ে মাথা উঁচু করে, আপসহীন কণ্ঠ মেলে ধরে এখন সে বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছে। হাদির প্রতি আমাদের বুক ভরা ভালোবাসা ও দোয়া।

তিনি বলেন, হাদি যেন আমাদের মায়েদের গর্ভে বেশি বেশি করে জন্ম নেয়, তাহলে বাংলাদেশ পথ হারাবে না। আমরা সেই গর্বিত মা চাই, আর আমরা সেই বীর হাদি চাই। এক হাদি চলে গেছে, আল্লাহ যেন এই দেশে লাখ লাখ হাদি জন্ম দেন।

উপস্থিত তরুণ ও যুবকদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমির বলেন, হাদি চলে গেছে অসুবিধা নাই। তোমার জায়গায় আমি দাঁড়িয়ে গেছি, আমি আছি, তোমরা কি বলতে পারবা এটা? তখন সমস্বরে সবাই বলেন, ‘হ্যাঁ পারব।’

মানসিকতার দিক থেকে নিজেকে যুবক দাবি করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কিন্তু বয়সের দিক থেকে তো একটা জায়গায় চলে এসেছি। এ জীবনে তো অনেক কিছুই এই রাষ্ট্রের এই জাতির আমরা ভোগ করেছি কিন্তু তোমাদেরকে রেখে যাব কোথায়? তোমাদের জায়গাটা, তোমাদের পাটাতনটা কী হবে? এটি আমাদের কর্তব্য, এই জায়গাটা তৈরি করে দিতে চাই। তোমাদের পছন্দের, গৌরবের, নিরাপদ বাংলাদেশ, ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। তোমাদের সাথে একসাথে কাজ করে, ইয়াং লিডারস হয়ে, তোমাদের নেতৃত্বে।

গণতন্ত্রের জন্য খালেদা জিয়ার লড়াইকে শ্রদ্ধা জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আজ তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমরা মহান রবের দরবারে দোয়া করি— আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি রহম করুন। আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের একজন অতিথি বা মেহমান হিসেবে কবুল করুন। তার পরিবারের সম্মানিত সদস্যবৃন্দসহ তার আপনজন, প্রিয়জন এবং তার সহকর্মীদের আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন।

তিনি বলেন, আমরা তোমাদের ভাবনাগুলো জানার জন্যই ইতোমধ্যে জনতার ইশতেহার রিলিজ করেছি। তোমাদের ভাবনা, তোমাদের চিন্তা, প্রস্তাবনা ও স্বপ্ন আমরা আমাদের ইশতেহারে তুলে ধরতে চাই। তোমাদের ভাবনায় বাংলাদেশ তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

জেইউ/এসএসএইচ