আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের করণীয় নির্ধারণ করতে ধারাবাহিক বৈঠকের শেষ দিন দলের ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মতামত নিয়েছে বিএনপি। আর বৈঠক উঠে আসা মতামতগুলো নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলতে নেতা-নেত্রীদের হাত তুলে ওয়াদা করিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত চার ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক চলে। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে এতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওয়াদা করানো হয় বলে জানা গেছে। 

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপিতে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে যারা দলের জন্য কাজ করতে আগ্রহী নন, তাদের নিজ থেকে পদ-পদবী থেকে সরে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা। আন্তরিক, আগ্রহী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা যেন সংগঠনে এসে কাজ করতে পারেন তিনি সেই সুযোগ করে দিতে বলেন। 

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, বিএনপির অঙ্গসংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল ও মহিলা দলের বর্তমান নেতৃত্বের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে এই তিনটি সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

বৈঠক উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, উপস্থিত অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা বলেছেন যে, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে, নতুন কর্মী তৈরি করতে হবে। তাদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলো আপনাদের করতে হবে। জেলায়-জেলায় সফর করতে হবে। আমাদের বয়স হয়েছে। এখন আন্দোলনে তরুণদের সামনে থাকতে হবে। আমরা শুধু পরামর্শ দিতে পারব।

বৈঠকে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, গত দুদিন বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলতে। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বৈঠকের আলোচ্য বিষয়বস্তু নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাই আজকের বৈঠকের শেষ পর্যায়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা সবাইকে দুই হাত তুলিয়ে ওয়াদা করান যে, কোনো নেতা যেন বৈঠকে উঠে আসা মতামতগুলো নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, আজকের বৈঠকে স্থায়ী কমিটির নেতারাও বক্তব্য রাখেন। সবার বক্তব্যেই আন্দোলন নামার বিষয়টি উঠে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ হবে না। আমাদের কারও বক্তব্যে যেন নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা না আসে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ফাঁদে আমাদের পড়া যাবে না। আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে আগে নিরপেক্ষ সরকার আদায় করতে হবে। 

জানা গেছে, তৃতীয় দিনের বৈঠকে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, উলামা দল, মৎস্যজীবী দলসহ অঙ্গসংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতা মিলে ৯২ জন অংশ নেন। প্রত্যেক সংগঠনের পাঁচজন করে শীর্ষ নেতা বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।

এএইচআর/আরএইচ/এইচকে