সরকার-জামায়াত উভয়ই এবি পার্টি নিয়ে চিন্তিত
‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ’ বলে মনে করছেন ‘আমার বাংলাদেশ’ (এবি) পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। তার মতে, “এখন রাজনীতি করা মানেই হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া। অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া। গুম হয়ে যাওয়া। এমন পরিস্থিতি ও পরিণতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা নতুন দল ‘এবি পার্টি’ গঠন করেছি। কারণ, আমরা অধিকারভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী।”
এবি পার্টি গঠনের আগে মজিবুর রহমান মঞ্জু স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর মজলিসে শুরার সদস্য ছিলেন। এর আগে দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে জামায়াতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর এবি পার্টি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন মঞ্জু।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি এবি পার্টি গঠন, নতুন দলের সার্বিক কার্যক্রম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের দলত্যাগ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আদিত্য রিমন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
ঢাকা পোস্ট : জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর এবি পার্টি গঠন করলেন। আপনারা যারা উদ্যোগ নিলেন সবাই জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ফলে নতুন দলে জামায়াতের আদর্শ প্রতিপালন হবে কি না, না হলে আপনাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হবে? এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন হয়েছে কি না?
বিজ্ঞাপন
মজিবুর রহমান মঞ্জু : ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল আমরা ১০-১৫ জন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একটি রাজনৈতিক দল গঠন করব। তখন দলটির নাম দিয়েছিলাম ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’। ওই সময় আমরা কিছু কনসেপ্ট (ধারণা) দিয়েছিলাম যে এ রাজনৈতিক দল কোনো মতবাদ বা মতাদর্শকেন্দ্রিক না হয়ে অধিকারকেন্দ্রিক হবে। যারা এর সঙ্গে যুক্ত হতে চান আমাদের যেখানে ডাকবেন, আমরা সেখানেই যাব। এর মধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক এসেছে, আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
দেশের বাইরে বিশেষ করে ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আমাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করেছে। আমরা কয়েকটি দেশেও গিয়েছি। মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট রাজনীতিক আনোয়ার ইব্রাহিম ও তার স্ত্রীর সঙ্গেও আমাদের নতুন রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে কথা হয়েছে। সেখানে নতুন একটি দলের দুজন মন্ত্রীর সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। একইভাবে আমরা তুরস্কের সফল রাজনৈতিক দল এ কে পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তারা কীভাবে এত দ্রুত রাজনৈতিক সফলতা পেল, কীভাবে অধিকারভিত্তিক রাজনীতিকে সামনে আনল— এসব অভিজ্ঞতা তারা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
আমরা যারা নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল একটি ইসলামি দলের। সেই দল থেকে বেরিয়ে এসে আরেকটি ইসলামি দল গঠন করা হবে— সবাই এমনটি ভেবেছিল। বাংলাদেশে যারাই নতুন দল গঠন করেছেন তারা সবাই আগের দলের নতুন একটি সংস্করণ নিয়ে এসেছেন। আমরা কিন্তু সেই পথে যাইনি। আমাদের সঙ্গে যারাই যুক্ত হয়েছেন তাদের সবার মতামত নিয়ে দলের নাম ঠিক করেছি। সেই অনুযায়ী ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ থেকে নাম রাখা হয়েছে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’। একইভাবে পার্টির কর্মসূচি, গঠনতন্ত্র ও ২২২ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণা করেছি।
করোনার মধ্যে আমাদের মধ্যে দ্বিধা-সংকোচ ছিল যে এ সময়ে নতুন দল ঘোষণা করব কি না। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ সদস্য মনে করেছিলেন আমরা যেহেতু অধিকার আদায়ে রাজনীতি করব, সেহেতু জাতীয় এমন সংকটময় মুহূর্তে নতুন দলের ঘোষণা দেওয়া দরকার। আমরা যে মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করব, সেই সাহস এখনই দেখানো দরকার। সেই চ্যালেঞ্জ থেকেই ২০২০ সালের ১০ মে জাতির ক্রান্তিকাল নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিয়েছি আমরা।
পুরো করোনার সময় এবি পার্টি মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিল। আমরা প্রায় ৫০ হাজার পিপিই বিতরণ করেছি, ৮০টি ফুড ব্যাংক পরিচালনা করেছি। এছাড়া মানুষের মধ্যে লাখ লাখ করোনার সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছি।
ঢাকা পোস্ট : এবি পার্টির সাংগঠনিক কাঠামো কোন পর্যায়ে আছে?
মজিবুর রহমান মঞ্জু : আজ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪১ জেলা ও ৮০টির মতো উপজেলায় কমিটি গঠন করেছি। দেশের বাইরে মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১১টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কমিটি হয়েছে। আস্তে আস্তে আমাদের কমিটির কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দল করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। এর আগে যারা নতুন দল করে আলোচনায় এসেছেন, তারা সবাই বিখ্যাত লোক ছিলেন। কিন্তু আমরা যারা দলটি করার উদ্যোগ নিয়েছি তারা কেউ বিখ্যাত নন। আমরা রাজনৈতিককর্মী ছিলাম। তবে, রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা ও পর্যবেক্ষণ ছিল।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে এখন রাজনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। এখন রাজনীতি করার মানে হলো জীবনের ঝুঁকি নেওয়া। অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া। গুম হয়ে যাওয়া। দমন-নিপীড়নের মধ্যে পড়া। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা একটি দল করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।
আমরা জানি যে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে বাংলাদেশে কোনো দলই সুবিধা করতে পারেনি। তারপরও আমরা নতুন একটি দল করার সাহস দেখিয়েছি। কারণ, আমাদের এ বিষয়ে বিরাট একটি গবেষণা ছিল। কেন পুরনো দলগুলো সফল হচ্ছে না। আমরা দেখেছি তাদের পাঁচটি জিনিসের অভাব ছিল। সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। মূলত, তারা তাদের উদ্দেশ্যগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেননি। তারা কী চান, কোন ধরনের পরিবর্তন চান— সেগুলো উপস্থাপন করতে পারেননি। মানুষ মনে করেছে আগের দলে তাকে অসম্মান করা হয়েছে, প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি নতুন দল গঠন করেছেন। ওই জায়গা থেকে আমরা এবি পার্টি করিনি।
ঢাকা পোস্ট : এবি পার্টিকে রাজপথের কর্মসূচির চাইতে ঘরোয়া কর্মসূচিতে বেশি দেখা যায়। কারণ কী?
মজিবুর রহমান মঞ্জু : আমরা এখন দল গোছানো এবং ঘরোয়া কর্মসূচিতে আবদ্ধ আছি। মাঠে অল্পকিছু কর্মসূচি দিয়েছি। ধর্ষণের প্রতিবাদে, স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া এবং লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছি। আসলে কয়েকটি কারণে এবি পার্টি রাজপথের কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত আছে। প্রথমত, রাজপথে কর্মসূচি দিতে গেলে পুলিশের বাঁধার মুখে পড়তে হয়।
মাঠের কর্মসূচি তো দূরের কথা, ঘরোয়া কর্মসূচিতেও আমাদের বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে। কয়েক দিন আগে ফেনীতে সন্ত্রাসী হামলা হলো। দিনাজপুর, রাজশাহীতে আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ বাঁধা দেয়। বর্তমানে যেকোনো অনুষ্ঠানে গেলেই দেখবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক এসে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। মোট কথা, বাংলাদেশের রাজপথে এখন গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। রাজপথের কর্মসূচির জন্য যে ধরনের সাংগঠনিক শক্তি দরকার, সেটি মজবুত করতে কাজ করছি আমরা। এরপর রাজপথের কর্মসূচি দেবে এবি পার্টি।
ঢাকা পোস্ট : আপনি বলছেন মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বেশকিছু দেশে এবি পার্টির সাংগঠনিক কমিটি আছে। কিন্তু ইসির আরপিও অনুযায়ী দেশের বাইরে কোনো দলের কমিটি থাকলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হবে। এছাড়া দলগুলো অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে প্রবাসে কমিটি দেয়। প্রবাসীরাও নির্বাচনের সময় টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন কিনে নেয়। এসব বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
মজিবুর রহমান মঞ্জু : নির্বাচন কমিশনের আরপিওতে বলা হয়েছে, দেশের বাইরে কোনো কমিটি থাকতে পারবে না। আবার এটাও বলা আছে যে প্রবাসীরা রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন। এটি কিন্তু স্ববিরোধী। তারপরও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কখনও যদি আমাদের কথা হয়, বিষয়টি তুলে ধরব। আর প্রবাসের কমিটি বলতে যারা সেখানে এবি পার্টির রাজনীতি করতে আগ্রহী তাদের সংগঠিত করছি আমরা। প্রবাসে কমিটি করা মানে এ নয় যে তারা সেখানে মিটিং-মিছিল করবেন। দেশের মতো সেখানে তারা রাজনীতি করবেন— এমনটিও নয়।
প্রবাসীরা কিন্তু অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, অনেক কষ্টের মধ্যে থেকে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তারা সরকারের সহযোগিতা তেমন পান না। অথচ তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। সুতরাং তাদের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। আমরা সে চেষ্টাই করছি।
তবে, আপনি যেটা বলছেন, প্রবাসীদের দলে পদ দেওয়া, এমপিপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া…, আমি তো কোনো অসুবিধা দেখি না। অনেক প্রবাসী আছেন যারা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখছেন, সাহায্য-সহযোগিতা করছেন; তারা যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতি ও নির্বাচন করতে চান, সেই পথ তো আমাদের খোলা রাখতে হবে। তবে, শুধু অর্থের বিনিময়ে রাতারাতি কেউ দলের পদ গ্রহণ করবেন, এটি হওয়া উচিত নয়। আমরা এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতি প্রণয়ন করব।
ঢাকা পোস্ট : এবি পার্টি নিয়ে দুই ধরনের প্রচারণা রয়েছে। কেউ বলছেন, আপনারা জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নতুন নামে এসেছেন। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের সহযোগিতা নিয়ে এবি পার্টি রাজনীতি করছে। আসলে কোনটি সত্য?
মজিবুর রহমান মঞ্জু : শুরু থেকেই আমরা কিন্তু উভয়পক্ষের (সরকার ও জামায়াত) বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি। সরকার বলছে, আমরা জামায়াতের ‘বি’ টিম। জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নতুন নামে অন্য একটি দল করেছি। অন্যদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, কেউ যেন আমাদের সঙ্গে কথা না বলে। কথা বললে তার দলীয় পদ বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আমরা ঈমান-হারা হয়ে গেছি, বেঈমান হয়ে গেছি।
এটি কিন্তু আমরা পজিটিভলি দেখছি। কারণ, নতুন দল হিসেবে আসার ফলে আমাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। উভয়পক্ষই আমাদের নিয়ে সতর্ক। জামায়াত ও সরকার এবি পার্টি নিয়ে একজোট হয়েছে যে, তারা আমাদের বাড়তে দেবে না। এটিও আমাদের জন্য ভালো। সরকার তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে রাত-দিন এবি পার্টিকে নিয়ে গবেষণা করছে। এমনকি এবি পার্টির অনেক নেতাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমার কথা হচ্ছে, যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন যে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে এবি পার্টি হয়েছে, তারা প্রমাণ দিক। একইভাবে যারা বলছেন অন্য কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নে নতুন মোড়কে এবি পার্টি এসেছে, তাদেরও বলছি আপনারা প্রমাণ দিন।
মজিবুর রহমান মঞ্জু, সদস্য সচিব, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি /ছবি- ঢাকা পোস্ট
এবি পার্টি শুরু থেকেই খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের একমাত্র শক্তি হচ্ছে নতুন কনসেপ্ট (ধারণা), যা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এ কারণে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে আছেন। যদিও খুব বেশি বিখ্যাত লোক আসছেন না। তারপরও নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ এবি পার্টির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। নারী ও যুবকদের বড় একটি অংশও আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি, একটি রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠার জন্য যে ধরনের ক্রমধারা দরকার, এবি পার্টি সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, এবি পার্টি কোনো হাইব্রিড নয়।
ঢাকা পোস্ট : নতুন দল গঠনের এক বছরের মাথায় আপনাদের বেশকিছু নেতা অন্য একটি দলে ভিড়েছেন। কেন তারা এমনটি করলেন?
মজিবুর রহমান মঞ্জু : হ্যাঁ, কিছু নেতা কয়েকদিন আগে পদত্যাগ করে অন্য একটি দলে যোগ দিয়েছেন। যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের কেউ কিন্তু আমাদের দলে যোগ দেননি। তারা সবাই এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বা অংশীদার কী কারণে দলত্যাগ করলেন। এর পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। এক. তিনি হয়তো হতাশায় ভুগছিলেন। যেভাবে তিনি দল গঠন করতে চেয়েছিলেন, সেভাবে হয়তো পারছিলেন না। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, দলের ওপর কোনো কারণে তিনি অসন্তুষ্ট হতে পারেন। একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার হয়তো মূল্যায়ন হচ্ছিল না। এ কারণে তিনি চলে যেতে পারেন।
আমাদের দলের সহকারী সদস্য সচিব ছিলেন এমন তিন-চারজন নেতা কল্যাণ পার্টিতে গিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। একজন সহকারী সদস্য সচিব সেই দলে গিয়ে সরাসরি মহাসচিব হয়েছেন। এটি কষ্টদায়ক। কেন তারা যাচ্ছেন— এটি দেখার জন্য আমরা একটি কমিটিও করেছি। আমাদের কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, সেটি খুঁজে বের করার জন্য।
পাশাপাশি একটি আনন্দের বিষয় হলো যে এক-দেড় বছর হলো একটি দল তৈরি হয়েছে, যাকে নিয়ে এত হাসাহাসি; সেই দলের একটি অংশ নিবন্ধিত একটি দলের উচ্চ পদে আসীন হয়েছে— এটি তো আমাদের জন্য সফলতা। আমি তো বলতেই পারি, এবি পার্টি এক-দেড় বছরের মধ্যে তার চেয়ে বড় একটি দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য হয়েছে। যারা এবি পার্টি নিয়ে হাসাহাসি করেছেন, এখন তাদের মুখ বন্ধ হবে।
ঢাকা পোস্ট : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এবি পার্টির ভাবনা কী? আপনারা কি নির্বাচনে অংশ নেবেন? নিলে এককভাবে, নাকি জোটবদ্ধভাবে; যদিও আপনাদের নিবন্ধন নেই। জোটে গেলে সরকারি নাকি বিরোধী জোটে যাবেন?
মজিবুর রহমান মঞ্জু : ২০২৩ সালে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আদৌ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না? নাকি ২০১৮ সালের মতো আগের রাতে নির্বাচন হয়ে যাবে, নাকি বড় ধরনের নতুন কোনো ফর্মুলা হাজির হবে। হয়তো দেখা যাবে সরকারি দল ২৯৯ আসনেই বিজয়ী হয়েছে!
আমাদের কথা হচ্ছে, যদি গ্রহণযোগ্য ফর্মুলায় নির্বাচন হয়, তাহলে এবি পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। এরপর আমরা নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেব এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করব। এক্ষেত্রে এবি পার্টির স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।
নির্বাচনের বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠনের চিন্তা আছে আমাদের। এছাড়া প্রাথমিকভাবে ১০০ আসনে প্রার্থিতা দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে। এটি নিয়ে এবি পার্টি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে সেই নির্বাচনে তো অংশগ্রহণের কোনো মানেই হয় না।
আর এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভর করবে তখনকার পরিস্থিতির ওপর। যদি মনে হয় জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে সুবিধা হবে, আমরা সেভাবে করব। আমাদের প্রধান টার্গেট হলো সারাদেশের মানুষকে দেখানো যে এবি পার্টি নামে নতুন একটি দল আছে। সেক্ষেত্রে ৩০০ আসনেই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আসলে সবকিছু নির্ভর করছে তখনকার পরিস্থিতির ওপর।
আমাদের দেশের রীতি অনুযায়ী সরকারকেন্দ্রিক একটি জোট হয়, আরেকটি হয় বিরোধী দলকেন্দ্রিক। সহজ কথায় বলতে গেলে একটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, আরেকটি বিএনপির নেতৃত্বে জোট। এর বাইরে তো কিছুই হতে পারে না। এবার আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে তৃতীয় একটি জোটের কথা শুনছি। সুতরাং আমাদের সামনে তিনটি অপশন আছে।
তবে, কোন জোট এবি পার্টিকে পাশে পেতে চাচ্ছে, তাদের বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার দেব। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, দেশ ও জাতীয় স্বার্থ এবং তৃতীয়ত হচ্ছে, দলের স্বার্থ। এ তিনটি জিনিস বিবেচনা করেই আমরা (এবি পার্টি) জোটবদ্ধ হব।
বর্তমান সরকার মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে, দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে— এসব নিয়ে সাধারণের মধ্যে তাদের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। বিষয়গুলো সামনে আসলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, আমরা কেন সরকারি জোটে যাব। আবার যদি দেখি, সরকারি জোটের মতো বিরোধীপক্ষের ওপরও মানুষের আস্থা নেই, সেক্ষেত্রে তৃতীয়পক্ষের যে উত্থান, আমরা সেই জোটে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করব। সম্পূর্ণ বিষয়টি তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। পরিস্থিতি দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
এএইচআর/এমএআর