ভোটাধিকার রক্ষার দাবিতে সব রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলন ও গণফোরামসহ বিভিন্ন দলের সিনিয়র নেতারা। 

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণসংহতি আন্দোলনের চতুর্থ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তারা।

গণসংহতি আন্দোলনের এ সম্মেলনে সারাদেশে ৫০টিরও বেশি জেলার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এছাড়া, হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ক্লাবের পর্ব শেষে নেতাকর্মীদের একটি মিছিল মৎস্যভবন মোড় ঘুরে আবার প্রেস ক্লাবের দিকে যায়। 

সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, সবাই দেশে বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায়, তারা কোনোভাবেই জনগণের আস্থাভাজন নয়, জনগণের কাছ তারা থেকে দায়িত্ব পায়নি। কিন্তু তারা ক্ষমতা প্রয়োগ করে যাচ্ছে। দেশে ষোলোআনা স্বৈরতন্ত্র বিরাজ করছে। আজ দেশকে বাঁচাতে হলে জনগণের ঐক্যকে গুরুত্ব দিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। তাহলেই আমরা রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।

জেলায়-জেলায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। এখন মাঠে নামলেই বিজয় আসবে। আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করে দেখিয়েছি, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো শক্তিই বিজয় ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। ঐক্যবদ্ধভাবে এবারও আমরা রাস্তায় নামলে বিজয় আসবেই।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নৌকা ডুবে গেছে। আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। তাই বলতে চাই, আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজপথ দখল করতে হবে। আমরা সবাই যদি একসঙ্গে রাস্তায় নামি, তাহলে বিজয় আসবেই। আমরা যদি রাজপথ দখল করি, আগামী এক বছরের মধ্যে সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় হবে। আমাদের হাতে দুই বছর সময় আছে, জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।  

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, কাল মার্ক্সকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনার জীবনের সুখ কি? তিনি বলেছিলেন, আমার সুখ হচ্ছে লড়াই করা। আপনারা লড়াই করে গণসংহতি আন্দোলনকে দাঁড় করিয়েছেন। এ লড়াইটাকে আপনারা সুখ-আনন্দ হিসেবে পরিকল্পনা করেছেন।

তিনি বলেন, কী দুর্ভাগ্য যে আওয়ামী লীগ ভোটের জন্য লড়াই করেছিল, এখন সেই আওয়ামী লীগই রাজপথে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহ্য করতে পারে না। আমাদের সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। ভোটের অধিকার রক্ষায় রাস্তায় নামতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা গণমানুষের রাজনৈতিক দল। গণমানুষের স্বার্থের বাইরে কোনো স্বার্থ নেই আমাদের। সমস্ত মজলুমের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা লড়াই করি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিনিময়ে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিবেন, এমন কোনো কথা ছিল না। দেশে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জবরদস্তি আর কিছুই হতে পারে না।   

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে সাকি বলেন, এ দেশের মানুষ আর বিনা ভোটের নির্বাচন হতে দেবে না। আপনারা যতই নীল নকশা করুন না কেন। আমি সব রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই-আমরা হয়তো সবাই এক মঞ্চে উঠতে পারব না। কিন্তু যার-যার অবস্থান থেকে ভোটাধিকার আদায়ে রাস্তায় সংগ্রাম-আন্দোলন করতে পারি। তাহলে আমাদের বিজয় আসবে।

গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের নেতা ফিরোজ আহমেদ, তাসলিমা আক্তার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম, জুলহাস নাঈম বাবু, কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য সৈকত মল্লিক, আশরাফুল আলম সোহেল প্রমুখ।  

এএইচআর/আরএইচ