মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর / ফাইল ছবি

দলীয় নেতাকর্মীদের হট্টগোল নিয়ে বরাবরের মতো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘কথা শুনতে না চাইলে কক্ষের বাইরে চলে যান অথবা আপনারা মাইকে এসে কথা বলেন, আমরা মঞ্চে বসে শুনি।’

শনিবার (৬ নভেম্বর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের স্মরণ সভা উপলক্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রীয় নেতারা যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন পেছনে থাকা নেতাকর্মীরা কথা বলছিলেন।

এ নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বক্তব্য দিতে এসে নেতাকর্মীদের কথা বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু তারপরও নেতাকর্মীদের কথা থামছিল না। এ জন্য মির্জা ফখরুল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ডায়াস থেকে বক্তব্য শেষ না করেই নিজ আসনে বসে পড়েন।

মহাসচিব বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে আমরা কেন এ রকম সভায় আসি সেটা বোধ হয় নিজেরাও জানি না। এটা একটা স্মরণ সভা, এমন একজন নেতা যিনি আমাদের অতীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন এবং সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তার স্মরণ সভায় এসে আমাদের এসব সমস্যা সমাধান করতে হয়!’

তিনি আরও বলেন, ‘কীভাবে কথা বলবেন। দেখুন এখানে ইয়ং ছেলেরা আছে, তরুণরা আছে। হয় তারা ছাত্রদল, না হয় যুবদল, না হয় স্বেচ্ছাসেবক দল অথবা মহানগরের নতুন কমিটির সদস্য। তারা তো এখানে কথা শুনতে আসেনি। অনেকে বহুবার বলেছেন এখানে। কিন্তু আমরা কেউ কর্ণপাত করছি না। আমাদের এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে যায়।’

এ সময় ডায়াসের ডান দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানকার সমস্যাটা কী? ওয়াট ইজ দ্যা প্রবলেম দেয়ার। এভাবে আমি কথা বলব না।’

এ সময়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শামীমুর রহমান বলেন, ‘আপনারা চুপ করেন। কেউ কথা বলবেন না। প্লিজ মহাসচিব এখন বক্তব্য রাখবেন। সবাই বসে পড়েন। শান্ত হয়ে বসেন। আমাদের সংগ্রামী মহাসচিব কথা বলছেন।’

পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় বক্তব্য দিতে আসেন ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আবারও বলছি, আপনারা যদি মিটিং শুনতে আসেন, উনাকে স্মরণ করতে চান তাহলে দয়া করে শান্ত হয়ে থাকেন। তা না হলে আমাদের এখানে থাকার দরকার নেই, কোনো প্রয়োজন নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এভাবে কিছু হয় না। বিশেষ করে আমাদের তরুণ, যুবক, ছাত্র ও যুবদলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন আপনারা নিজেরা কিছু জানুন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। তা না হলে কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে না।’

এদিকে অনুষ্ঠান শেষে নেতাকর্মীরা একসঙ্গে বের হতে গিয়ে ইনস্টিটিউটের মূল গেটের একটা গ্লাস ভেঙে যায়। এ সময় নেতাকর্মীদের  করে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী সামাদ বলেন, বার বার বলছিলাম, আপনারা আস্তে যান। কেউ কথা শুনছেন না।

মির্জা ফখরুল তার বক্তব্য বলেন, ‘বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। একদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? তাদের তো এখন না খেয়ে অপুষ্টিতে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, আমরা সব সময় যেটা বলে আসছি, এখনো বলছি, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র পথ হচ্ছে এদের (আওয়ামী লীগ সরকার) সরিয়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা, পার্লামেন্ট তৈরি করা। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা সবাই রাজপথে নেমে আসি এবং আমাদের শক্তি দিয়ে, জনগণের শক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার তৈরি করি।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুজ্জামান শিমুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জয়ন্তু কুমার কুণ্ড, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এএইচআর/এসকেডি