দেশের আলোচিত রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী মারা গেছেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজারী সোমবার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। জয়নাল হাজারী তার জীবনের বেশিরভাগ জুড়েই ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত।

১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া জয়নাল হাজারী আওয়ামী লীগেই যুক্ত ছিলেন আজীবন। ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ২০ বছর ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে নাম লেখানো হাজারী ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম কাণ্ডারী হিসেবে দীর্ঘদিন ভূমিকা রেখেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নেন। পরে তিনি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ে ফেনীতে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন। ওই সময় ফেনীতে ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ ও ‘ক্লাস কমিটি’ গঠনসহ নানা ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনায় ছিলেন হাজারী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের পাশাপাশি নিজ দলের বিরোধীদের ওপরও নির্যাতন চালান জয়নাল হাজারী। তার নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকেরাও।

হাজারীর এমন সব কর্মকাণ্ডের কারণে ওই মেয়াদে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। ওই সময় ফেনীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন নেতাকর্মী মারা যান। 

২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৬ আগস্ট যৌথবাহিনী (বিডিআর-পুলিশ) অভিযান চালালে তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। ২০০৪ সালে হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

আট বছর দেশের বাইরে থাকার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরেন। ওই বছরের ১৫ এপ্রিল অর্থ পাচারের একটি মামলায় জামিন চাইতে গেলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

পলাতক অবস্থায় হাজারীর বিরুদ্ধে মোট ২৭টি মামলা হয়। যার মধ্যে পাঁচটিতে সাজার রায় হলেও উচ্চ আদালত তাকে সবগুলোতেই খালাস দেয়।

বহু ঘটনায় বিতর্কিত এই রাজনীতিবিদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনীর তিনটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও সেগুলো বাতিল হয়ে যায়।

স্থানীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে ২০১০ সাল থেকে রাজধানীতে থাকতে শুরু করেন জয়নাল হাজারী। এ সময় ঢাকা থেকে তার সম্পাদনায় ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ নামে পত্রিকা চালু করেন। 

আর বহিষ্কার দেড় দশক পর ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন তিনি। পরে হাজারীর অসুস্থতার জন্যে চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ত্রাণ তহবিল থেকে ৪০ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনী শহরের সহদেবপুরের হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে আব্দুল গণি হাজারী ও রিজিয়া বেগমের সংসারে জন্ম নেন জয়নাল হাজারী।

ওএফ