ইসি গঠনে টানা তিনবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়াকে দুঃখজনক মন্তব্য করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, একই বিষয় নিয়ে আমাদের পরপর তিনবার সংলাপে আসতে হলো, এটা প্রত্যাশিত না।

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন গঠনে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে সংলাপে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গভবন গেটে মেনন বলেন, সংলাপ চিরকাল হয়ে আসছে। অতীতেও হয়েছে। বিএনপি-জাতীয় পার্টির আমলেও নির্বাচন নিয়ে সংলাপ করেছি। আওয়ামী লীগ আমলে সংলাপ করছি। গণতন্ত্রে সংলাপের বিকল্প আছে বলে মনে করি না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিকে বললাম, আপনার কাছে তো এই প্রস্তাব ২০১৬ সালেও দিয়েছিলাম। এবারও আমরা সুস্পষ্টভাবে মনে করি আইন করা খুবই প্রয়োজন। তিনি একমত হয়েছেন যে, আইনটা ফরজ হয়ে গেছে আমাদের জন্য। কারণ আইন না করায় প্রতিবারই ইসি গঠন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এতে ইসি সম্পর্কে আস্থাহীনতা তৈরি হয়।

মেনন বলেন, ইসি গঠনে আইনের বিষয়ে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের মতের ঐক্য আছে। কেউ কিন্তু অস্বীকার করছে না। তাই রাষ্ট্রপতি যদি উদ্যেগ নেন তাহলে এটাকে আইনে রূপান্তর করা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতিও মনে করেন আইনটা হয়ে যাওয়া উচিত বলে জানান মেনন।

আইন তৈরির জন্য দেশের সব পেশাজীবীদের ডাকার জন্য রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানিয়ে মেনন বলেন, আপনার সময় কম হতে পারে, কিন্তু এক দুইদিন একটু পরিশ্রম করে হলেও সবাইকে ডাকেন, মতামত নেন।

তিনি বলেন,  সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে যে এত অল্প সময়ে নির্বাচন কমিশন আইন করা সম্ভব নয়। আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি- কেন করা সম্ভব হবে না? ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এক রাতের মধ্যে হয়েছিল। এমনকি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময় আপিলের প্রশ্নে এসে যে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল সেখানেও সময় লাগেনি। অন্যান্য আইনের ক্ষেত্রেও খুব একটা সময় লাগে না।

আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি- বছরের শুরুতে যে অধিবেশন হবে তাতেই আইনটি দিতে পারেন। এর কাঠামো অলরেডি তৈরি করা আছে। শামসুল হুদা কমিশন এটা তৈরি করে গেছে। এছাড়াও বিদগ্ধজনদের কাছে আইনের বিধানাবলী রয়েছে। সরকার চাইলেই এটা পেতে পারে। আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, আপনি যেহেতু প্রথম অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন, সেহেতু আপনি জাতিকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে আইনটি এই অধিবেশনেই পাস হবে।

তিনি বলেন, আমরা একটা কার্যক্ষম নির্বাচন কমিশন চাই। এই ইউপি নির্বাচন আমাদের সামনে দেখিয়ে দিল- অন্য নির্বাচনের কথা বাদ দিলাম। এই নির্বাচন দেখিয়ে দিল এই নির্বাচন কমিশন একেবারে নিশ্চেষ্ট। তাদের কোনো ধরনের তাপ-উত্তাপ নেই। বরং তারা সহিংস ঘটনাকে উৎসব বলছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের সব আইন রয়েছে। আমরা বলেছি আইনের প্রয়োগ যে নির্বাচন কমিশন করতে পারবে, সেই নির্বাচন কমিশন আমরা চাই। এটি আমরা বলেছি।

তিনি বলেন, রাজনীতি ক্রমাগত রাজনীতিবিদদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে। তাই রাষ্ট্রপতি দুঃখ করেছেন। সংসদের মধ্যেও রাজনীতিবিদের জায়গা নেই। আমরা আশা করব রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ভূমিকা পালন করবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, এবারের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য কোটি টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। আমরা যদি জাতীয় সংসদ সদস্য হই। তখন কী হবে সেটা তো বোঝা উচিত আমাদের। যারা এই টাকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, একটা স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে দাঁড়াতে পারবে সেই নির্বাচন কমিশন আমরা চাই।

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছি। তাই যেটা সংবিধানে নেই সেটা নিয়ে কথা আমরা বলছি না।

তিনি বলেন, যদি সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠিত হয়। সেক্ষেত্রে সার্চ কমিটির সুপারিশ করা নামগুলো সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিকে জানিয়ে দিতে হবে। যাতে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। না হলে প্রতিফলন ঘটে না, গোপন ব্যাপার হয়ে যায়। সেটার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন। ইসিতে দুজন নারীকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেছি।

সংলাপে সংবিধানের আলোকে ইসি গঠনে আগামী সংসদ অধিবেশনে আইন পাশের দাবিসহ ছয়টি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরে ওয়ার্কার্স পার্টি।

এর আগে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার পরে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে যায়। বিকাল ৪টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার মতো চলে এই সংলাপ।

এইউএ/ওএফ