সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকার

তফসিল অনুযায়ী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ছয় প্রার্থী। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য সাবেক বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে। মাঠের প্রচার-প্রচারণায় এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস স্থাপনে এগিয়ে রয়েছেন আইভি। তার চেয়ে দৃশ্যত অনেকটা পিছিয়েই আছেন তৈমূর। বুধবার (১২ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলী ও আদমজীনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্প অফিস ও অটোরিকশায় চলছে  আইভীর নির্বাচনী প্রচারণা। কিন্তু এ এলাকায় খুঁজে পাওয়ার যায়নি তৈমূর আলমের কোনো ক্যাম্প অফিস। কাওকে তার পক্ষে প্রচারণা চালাতেও দেখা যায়নি। এ এলাকায় অলি-গলিতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার ও ছোট-ছোট ব্যানারের পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে আইভিরও ব্যানার-পোস্টার। সেখানে অল্প কিছু জায়গায় দেখা গেছে তৈমূর আলমের পোস্টার। কিন্তু তার কোনো ব্যানার দেখা যায়নি। এ ওয়ার্ডের মতো একই চিত্র দেখা গেছে শহরের শায়েস্তাকান্দি এলাকায় এবং ১ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সালাউদ্দিন সানির নির্বাচনী ক্যাম্প অফিসে সামনে কথা হয় এলাকার ভোটার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। এ ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলমের নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস আছে কি না, তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমার চোখে তার অফিস চোখে পড়েনি। তবে,  মেইন রোডের পাশে আইভীর ক্যাম্প অফিস আছে।

একই ওয়ার্ডের চায়ের দোকানদার আবুল বাশারের দোকানে শোভা পাচ্ছে মেয়র প্রার্থী আইভীর পোস্টার। তৈমূর আলমের নির্বাচনী ক্যাম্প আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল রোডে তো তার অফিস নেই। ভেতরে কোথাও করেছে কি না জানি না।

নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের বিদ্যুতের খুঁটি, মার্কের সামনে ঝুলানো রয়েছে বর্তমান মেয়র আইভীর বড় বড় নির্বাচনী ব্যানার এবং বিভিন্ন সাইজের ফেস্টুন। আর সড়কের উপরে সুতা দিয়ে টানানো হয়েছে সারি-সারি পোস্টার। অন্যদিকে বিভিন্ন সড়কে  সুতায় তৈমূর আলমের অল্পকিছু পোস্টার দেখা গেলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি কোনো ব্যানার কিংবা ফেস্টুন।

শহরের কদমতলী এলাকায় সড়কের পাশে কথা হয় চায়ের দোকানদার মঞ্জুর মুরশিদের সঙ্গে। তার দোকানেও দেয়ালে সাঁটানো ছিলো মেয়র প্রার্থী আইভির বেশ কিছু পোস্টার। তিনি নৌকার প্রার্থীর সমর্থক কি না জানতে চাইলে বলেন, না আমি নৌকা কিংবা অন্য কোনো প্রার্থীর সমর্থক নই। নৌকা প্রার্থীর লোকজন এসে পোস্টার লাগিয়ে দিয়েছে। অন্য কোনো প্রার্থীর সমর্থকরা পোস্টার লাগায়নি।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৈমূর আলম খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমার নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস আছে। হয়তো কিছু কিছু ওয়ার্ডে নাও থাকতে পারে। তবে, ভোটাররা আমার সঙ্গে আছে। আমার পক্ষে আছে।

ভোটের পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। তবে, আমার অনেক নেতাকর্মীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়।

এর আগে, দুপুরে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী ‘শোডাউন’ করেছেন সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। খানপুরে পথসভা শেষে তৈমূর আলমের নেতৃত্বে শহরে বড় মিছিল বের হয়। পথসভায় তিনি বলেন, জনমত আমাদের পক্ষে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেভাবে জনগণের সাড়া মিলছে, তাতে ১৮ বছরের ক্ষোভ নিরসনের লক্ষ্যে একটা পরিবর্তন অবশ্যই হবে।

এ সময় তৈমূর আলম একটি ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে রাস্তার দুই পাশের উপস্থিত জনতাসহ বাসাবাড়ির বারান্দায় দাঁড়ানো লোকজনের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তিনি দুহাত তুলে সবার কাছে দোয়া চান।

মিছিল নিয়ে বের হওয়ার আগে তৈমূর আলম বলেন, আমি এ সিটি করপোরেশনকে গণমুখী সিটি করপোরেশনে পরিণত করব। এ নগর হবে একটি নিরাপদ ও আধুনিক নগর। এ নগর হবে একটি অসাম্প্রদায়িক নগর। এ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত হবে।

নারায়ণগঞ্জে আসা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ করেন তৈমূর আলম। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে কিছু সম্মানিত মেহমান আসেন। তারা এসে নারায়ণগঞ্জে এমন কিছু কথা বলেন, যেটা নারায়ণগঞ্জের মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। একজন বলে গেছেন, তৈমূরকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। আরেকজন বলেছেন, ঘুঘু দেখেছ, তো ঘুঘুর ফাঁদ দেখনি। এখন আমরা ফাঁদ দেখা শুরু করেছি।

কীভাবে?—এমন প্রশ্ন তুলে তৈমূর আলম বলেন,  আমাদের নেতাকর্মীদের অনেককে গ্রেফতার করেছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে। এত দিন পুলিশ সুপার কাউকে গ্রেফতার করেননি। যারা রাজনীতিবিদ এখন তাদের মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে গ্রেফতার করছেন। এ অবস্থার অবশ্যই নিরসন হবে। কারণ জনমত আমাদের পক্ষে। এ পুলিশি নির্যাতন, সরকারি নির্যাতন যতই বৃদ্ধি পাবে, ততই আমাদের পক্ষে জনসমর্থন বৃদ্ধি পাবে।

ভোটে প্রার্থীদের অবস্থা নিয়ে মন্তব্যে ভয় ভোটারদের

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী স্লোগান হলো, ‘নয় শঙ্কা নয় ভয়, চাই শহর শান্তিময়’। কিন্তু এ সিটির সাধারণ নাগরিক ও ভোটারের মধ্যে এক ধরনের ভয় দেখা গেছে। সেটি হলো, মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আইভী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক বিএনপির নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে ভোটের মাঠে কার কী অবস্থা তা নিয়ে কথা বলতে ভয় দেখা গেছে।

ভোটের মাঠে কোন প্রার্থী এগিয়ে, কোন প্রার্থী পিছিয়ে বা কার অবস্থান ভালো, কার অবস্থান খারাপ, এ নিয়ে ভোটারদের সকলের বক্তব্য কাছাকাছি। সবার বক্তব্য, ভোটের দিন ফলাফলের পর এ অবস্থা জানা যাবে। কারণ এখন এ নিয়ে মন্তব্য করলে বিপদ হতে পারে। আবার কারো কারো মতামত হচ্ছে, দুই প্রার্থীর অবস্থাই ভালো, এখন ভোটাররা যাকে ভোট দেবেন, তিনিই জয়ী হবেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী রাসেল আহমেদ। মেয়র প্রার্থীদের কার কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই, আমি রাজনীতি করি না। অফিসে থেকে নিচে নেমেছি একটু চা খেতে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা একটু বেশি এটা বলতে পারব। কিন্তু মানুষ কাকে ভোট দেবে, সেটা তো বলা মুশকিল। তবে, বর্তমান মেয়র এলাকায় উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের ইজিবাইক চালক সাইদুলের গাড়িতে বসে কথা হয় সিটি ভোট নিয়ে। ভোট নিয়ে তার বক্তব্য, বর্তমান মেয়র অনেক উন্নয়ন করেছেন। তবে, রাস্তার হকার উচ্ছেদ ও নগর থেকে রিকশা এবং ইজিবাইক সরানো নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। এখন ভোট গোপন বাক্সে কে কাকে দেবে, সেটা তো বলতে পারব না। তৈমূর আলম খন্দকারও ভালো মানুষ। মানুষও তাকে পছন্দ করে। মানুষও বিপদ-আপদে  তাকে পাশে পেয়েছে। ভোটে তার অবস্থাও ভালো।

এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য সাবেক বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ছাড়াও রয়েছেন খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এ বি এম সিরাজুল মামুন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মো. মাসুম বিল্লাহ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী মো. রাশেল ফেরদৌস।

এএইচআর/আরএইচ