সরকারের বিদ্যমান নিয়মকে উপেক্ষা করে কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশন নো ভিসা রিকোয়ার্ড (এনভিআর) সিল দেওয়ার নিজস্ব নিয়ম চালু করায় কানাডা প্রবাসীরা চরম হয়রানি এবং দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনারের সিদ্ধান্তকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা অনতিবিলম্বে হয়রানিমূলক নিয়ম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় ‘শওগাত আলী সাগর লাইভের’ আলোচনায় তারা এ দাবি জানান।

কানাডার স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টস ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ডাকসুর সাবেক এ জি এস নাসির উদ দুজা, ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ এবং বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়ের খোন্দকার।

প্রসঙ্গত, কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশন কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের হালনাগাদ পাসপোর্ট ছাড়া ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’ সিল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের আইনে হালনাগাদ বাংলাদেশি পাসপোর্টের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। বিশ্বের সবদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা নিয়ম অনুসরণ করে। কেবল কানাডায় হাইকমিশন নিজেদের নিয়ম চালু করেছে। এ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ তার নেওয়া হাইকমিশনারের সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হাইকমিশনার তাকে বলেছেন, এনভিআর তথা কনস্যুলার সেবাকে ডিজিটাল করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাছাড়া কানাডা থেকে কিছু সংখ্যক লোকের বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার বন্ধে তিনি নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন।

কনস্যুলার সেবা ডিজিটাইলড করার সঙ্গে এনভিআর ইস্যুর জন্য বাংলাদেশের হালনাগাদ পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করার কী সম্পর্ক- এ প্রশ্ন তুলে ডাকসুর সাবেক এজিএস নাসির উদ দুজা বলেন, পাসপোর্ট, ভিসা, এনভিআর- এগুলো হাইকমিশনারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। হাইকমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের আইন এবং নিয়ম অনুসরণ করা, নিজের সুবিধা মতো বিধি প্রণয়নের এখতিয়ার তাকে দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নিয়মকে পাশ কাটিয়ে হয়রানিমূলক বিধি চালু করে হাইকমিশনার কূটনৈতিক সীমালঙ্ঘন এবং এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন।

নাসির উদ দুজা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশনা প্রবাসে বাংলাদেশিরা যাতে কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বিভিন্ন দূতাবাসে এই নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। কিন্তু অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে প্রবাসীদের হয়রানির পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি অনতিবিলম্বে এনভিআর ইস্যুর হয়রানিমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে কনস্যুলার সেবা সহজ ও গণমুখী করার দাবি জানান।

কানাডায় বেড়ে ওঠা নিজের মেয়ের এনভিআর সিল নিতে গিয়ে হাইকমিশনের হাতে হয়রানির শিকার হওয়ার বিবরণ তুলে ধরেন ক্যালগেরির কমিউনিটি নেতা খায়ের খোন্দকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের আইনে এনভিআর এর জন্য হালনাগাদ বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বিশ্বের সব দেশেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দলিলগুলোর যেকোনো একটি জমা দিয়ে এনভিআর পাওয়া যায়। কিন্তু কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই নিময় মানছে না।

তিনি সরকারের গেজেট থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেট নোটিফিকেশনে যেখানে কানাডার পাসপোর্টধারীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাইরে রাখা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ বসবাস না করা সত্ত্বেও আমার মেয়ের বাংলাদেশ থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন করিয়ে আনতে হাইকমিশন বাধ্য করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সব ধরনের আইনই আমরা মানতে প্রস্তুত, কিন্তু সরকারের আইনের বাইরে ব্যক্তিগত হয়রানিমূলক নিয়ম আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে কেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, কেবল এনভিআরই নয় অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সবধরনের কনস্যুলার সেবায় বাংলাদেশের হালনাগাদ পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করেছেন। হঠাৎ করে চাপিয়ে দেওয়া এই সিদ্ধান্তে প্রবাসীরা সীমাহীন দুর্ভোগ এবং হয়রানির মধ্যে পড়েছেন। তিনি অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ব্যক্তি বিশেষের নয়, বাংলাদেশ সরকারের আইন যাতে অনুসৃত হয়, প্রবাসীদের দুর্ভোগ, হয়রানি বন্ধ হয়- সে ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এসএসএইচ