ভূমধ্যসাগরকে বলা হয় পৃথিবীর তিন মহাদেশের সন্ধি অর্থাৎ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশ এই ভূমধ্যসাগরের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে পরিবহন, বাণিজ্য ও সংস্কৃতি এ তিন মহাদেশকে একত্রিত করেছে। ইতিহাসবিদরা বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে এর জ্বলন্ত প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। সভ্যতার বিবর্তনকে উন্মোচিত করে তা তারা প্রমাণ করেছেন।

ইউরোপে পাড়ি জমানোর জন্য অভিবাসীরা এ ভূমধ্যসাগরের নীল জলকে বেছে নিয়েছেন। অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি জামাতে প্রধানত চারটি রুট ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ভূমধ্যসাগরে রয়েছে তিনটি রুট। এগুলো হলো- পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। চতুর্থ রুটটি স্থলপথে পশ্চিম বলকান অঞ্চল।

জলপথের এই তিনটি রুটির মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রুট হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। ২০২০ সালে অভিবাসীরা ইউরোপে পাড়ি জমাতে এ রুটটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। এ পথ দিয়ে  ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ৩৫ হাজার ৬২৮ জন অভিবাসী ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। যা আগের বছরের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বেশি। 

এ রুটে সাধারণত তিউনিসিয়া এবং লিবিয়া উপকূল থেকে অভিবাসীরা ইতালির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। অন্যান্য রুটের চেয়ে এ রুটটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। বলতে গেলে প্রতি মাসেই এ রুটে নৌকাডুবির খবর পাওয়া যায়। তবু অভিবাসীরা উন্নত জীবনের আশায় নিজের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে দেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশীদের বেশিরভাগ অভিবাসী এই রুট দিয়েই ইউরোপে পাড়ি জমান।

সবগুলো রুটের মধ্যে পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসীদের আগমন কিছুটা কম থাকলেও ২০১৯ সালের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের তুলনায় কম সংখ্যক অভিবাসী পশ্চিম বলকান অঞ্চল ব্যবহার করেছেন। এই রুটটিকে কঠিন  পথ হিসেবে ধরা হয় ও পাড়ি দিতে অভিবাসীদের দীর্ঘদিন যাবৎ অপেক্ষা করতে হয় ইউরোপে প্রবেশ করতে। কিছুদিন আগে জানা যায়, বেশকিছু বাংলাদেশি বসনিয়াতে অবস্থান করছেন সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার জন্য। ধারণা করা হচ্ছে এই অভিবাসীদের অনেকে ২০১৯ সাল থেকেই অপেক্ষা করছেন।

এ অভিবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হয়তো এক সময় ইউরোপে পাড়ি জমাতে পারেন। তবু জীবনের চাকা সহজে ঘুরে না। কারণ ইউরোপে থাকতে হলে প্রথমেই তাকে বৈধভাবে বসবাস করতে হবে। এ বৈধতার জন্য অনেকেই কিছুদিন থাকার সুযোগ হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেন এবং বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে আবেদনের মাত্র ৫ শতাংশ গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। যার কারণে পরে এই অভিবাসীদের জীবনযুদ্ধে অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, জীবনের শেষ সময়ে এসে বৈধ কাগজপত্র পাচ্ছেন। উন্নত জীবন একদিন ধরা দিলেও সে জীবন উপভোগ্য করে তোলা সম্ভব হয় না বেশিরভাগ বাংলাদেশি অভিবাসীর ক্ষেত্রে। ইউরোপে আসা প্রবাসীদের স্বপ্নগুলো শেষপর্যন্ত বেদনার নীল রঙে রঙিন হয়ে থাকে।

এসএসএইচ