ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠান

মনগড়া ও ভুয়া তথ্য দিয়ে কানাডায় ইমিগ্রেশনের নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে বিভিন্ন চক্র। ওয়ার্ক পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসা, চাকরি পাইয়ে দেওয়া বা ইমিগ্রেশন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে তারা সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করে বলে জানিয়েছেন কানাডায় ইমিগ্রেশন বিষয়ক তিন বিশেষজ্ঞ। জনসাধারণকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে সঠিক তথ্য তুলে ধরার তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইমিগ্রেশনের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আরও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ‘কানাডা ইমিগ্রেশনের মিথগুলো’ শিরোনামে এ আলোচনা অনুষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।  

ভুল কিংবা বিকৃত তথ্যের মাধ্যমে কানাডায় ইমিগ্রেশনের নামে প্রতারণার নানা চিত্র তুলে ধরে আলোচনা করেন এডুকেশন কনসাল্টিং এজেন্ট কায়েসুর রহমান, ইউটিউব ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সিদ্দিকুর রহমান এবং ইমিগ্রেশন নিউজ২৪ ডটকম-এর সম্পাদক ও প্রকাশক উজ্জল দাশ। 

আলোচনাকালে বক্তারা কানাডায় ইমিগ্রেশনের যেকোনো তথ্যের জন্য কানাডা সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের ওপর নির্ভর করতে পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে তারা কানাডা সরকারের অনুমোদিত বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয় এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইমিগ্রেশন বিষয়ক কোনো সেবা না নেওয়ার পরামর্শ দেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে এডুকেশন কনসাল্টিং এজেন্ট কায়েসুর রহমান বলেন, সন্তানদের কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করলেই বাবা-মা কানাডায় চলে এসে কাজ শুরু করতে পারেন, এমনকি তারা ইমিগ্রেশনও পেয়ে যাবেন- এমন একটি কথা বাংলাদেশের প্রচার পেয়েছে। এটি একেবারে মিথ্যা তথ্য। বিদেশি শিক্ষার্থীরা কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করা সাপেক্ষে ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীর বাবা-মা এসে কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট পান না। অল্পবয়সী শিক্ষার্থীদের বাবা অথবা মা- একজনকে ভিসা দেওয়া হয় সন্তানের সঙ্গে থাকার জন্য। তিনি এখানে ভিজিটর হিসেবেই অবস্থান করতে পারেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রভর্তির বিভিন্ন নিয়মাবলী আছে, ভিসার জন্য আলাদা শর্তাবলী আছে। এগুলো সম্পর্কে যথাযথ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ না করলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওয়ার্ক পারমিট ও কানাডায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার নানা চিত্র তুলে ধরে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই বিদেশ থেকে কর্মী নিয়ে আসতে পারে না। ‘কানাডায় পাওয়া যাচ্ছে না’- এটি প্রমাণ করতে পারার পরই সরকার বিদেশ থেকে লোক আনার অনুমতি দেয়। কাজেই যারা ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার কথা বলে বা ওয়ার্ক পারমিট পাইয়ে দেয়- তারা আসলে ভুয়া কাগজ দিয়ে প্রতারণা করে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কানাডায় ইমিগ্রেশনের অনেক খাত আছে। শর্তাবলী ও নিজের যোগ্যতা মিলিয়েই সেখানে চেষ্টা করা উচিত।

ইমিগ্রেশননিউজ ২৪ ডটকমের সম্পাদক ও প্রকাশক উজ্জল দাশ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করতে যাওয়ার সঙ্গে অনেকে কানাডায় ইমিগ্রেশনকে মিলিয়ে ফেলেন। কোনো দালাল বা আইনজীবী, কনসাল্ট্যান্ট যে কাউকে কানাডায় ভিসা বা ইমিগ্রেশন করিয়ে দিতে পারেন না- সেটি অনেকেই বিবেচনায় রাখেন না। ফলে প্রতারণার সুযোগ তৈরি হয়। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউবে কানাডা ইমিগ্রেশনের খবর বা তথ্য পরিবেশনে অনেক সময় মূল তথ্য পাশ কাটিয়ে বাড়তি তথ্য বা ভুল ব্যাখ্যা যোগ করে দেওয়া হয়। এতে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং প্রতারকরা এ সুযোগটি কাজে লাগায়। ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সংবাদ এবং বিজ্ঞাপন প্রচার বা প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।  

নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, কানাডায় ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কানাডার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি ইমিগ্র্যান্ট এবং শিক্ষার্থী কানাডায় আসুক। সে কারণেই প্রতারণা এবং ভুল প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে তথ্য যাচাই-বাছাই করা মোটেও কঠিন কোনো কাজ না। গণমাধ্যমের জন্য সেটি আরও সহজ। পত্রিকাগুলো এখন প্রবাসী ফ্রিল্যান্সারদের লেখা প্রকাশ করে। সেসব লেখার তথ্য, বিশেষ করে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত তথ্যের যথার্থতা সম্পর্কে বাড়তি মনোযোগ না দিলে ইমিগ্রেশনকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রতারক চক্র সুবিধা নিতে পারে।

আরএইচ