পারস্য উপসাগরের উত্তর পশ্চিম কোণে অবস্থিত তেল সমৃদ্ধ অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত। আয়তন ১৭ হাজার ৮২০ বর্গ কিলোমিটার। মরু-প্রধান দেশ হওয়ায় চাষাবাদ কম। দেশটির চাহিদা মেটাতে কাঁচা শাক-সবজি ও ফল বেশিরভাগই আমদানি করতে হয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ থেকে। শাক-সবজি ও ফলমূলের চাহিদা পূরণ ও আমদানি কমাতে কুয়েত সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। কুয়েত সিটি হতে প্রায় ১শ কিলোমিটার দূরে সৌদি ও ইরাক সীমান্ত ঘেঁষে অফরা ও আবদালি অঞ্চলজুড়ে বিশাল বিস্তৃত মরু অঞ্চল।

ওই মরু অঞ্চলে প্রযুক্তি সাহায্যে বাংলাদেশিদের হাতের ছোঁয়ায় দেশি-বিদেশি শাক-সবজিতে মরুভূমির চারদিক সবুজ আর নানা রঙয়ের ফলে-ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে। দেখে মনে হয়, এ যেন বাংলাদেশের কোন কৃষি অঞ্চল। সাপ্তাহিক ছুটি ও বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক জীবন থেকে প্রশান্তির খোঁজে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব মিলে ছুটে যান কৃষি অঞ্চল অফরা ও আবদালিতে, মিশে যাওয়ার চেষ্টা করেন সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে।

কুয়েতে আড়াই লাখ বাংলাদেশির মধ্যে ২০ থেকে ২৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি এই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি রয়েছে অন্যান্য দেশের নাগরিকও। দীর্ঘদিন এই কাজে জড়িত অনেক বাংলাদেশি সফল হয়েছে। স্থানীয় আরবদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে অথবা ইজারা নিয়ে এককভাবে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন কৃষি প্রজেক্ট।

বাংলাদেশি শ্রমিকরা ধৈর্য, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে দেশি-বিদেশি নানা জাতের শাক-সবজি ও ফলমূল ফলাচ্ছেন। তারা এসব উৎপাদিত ফসল কুয়েতের সেন্ট্রাল সবজি মার্কেটে ও সুপারশপগুলোতে বিক্রি করেন।

এসব এলাকায় প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা কুয়েতের সিংহভাগ সবজির চাহিদা মেটাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারা উৎপাদন করছেন ফুলকপি, লাউ, বাঁধাকপি, লাল শাক, ধনেপাতা, শিম, করলা ও পালং শাকসহ নানা ধরনের শাক-সবজি। আম, কলা, আনারস, আঙুর, কমলা ও পেঁপে-সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফলও চাষ করে থাকেন।

প্রচণ্ড গরমেও বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে শীতকালীন সবজি উৎপাদন করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনেকে সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করেও মাস শেষে যে মজুরি পান তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকরা দেশীয় সবজি উৎপাদন করতে পেরে এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক পেয়ে খুশি।

সরকারিভাবে যদি কম খরচে দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিক পাঠানো যায় তাহলে কুয়েতের কৃষি খাতে বাংলাদেশিদের অবস্থান শক্তিশালী হতো এবং রেমিট্যান্সের পরিমাণও বাড়ত বলে মনে করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

চট্টগ্রামের নোমান বলেন, কুয়েতে প্রবাস জীবন আমার ২২ বছর চলছে। এই মাজরায় ছয় বছর ধরে কাজ করি। আগে অন্য মাজরায় কাজ করেছি। ভালো আছি। ৮ ঘণ্টা ডিউটি করে ১৭০ কুয়েতি দিনার পাই। আমরা এখানে বাংলাদেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি ও ফল চাষ করি।

কুয়েত সিটি থেকে ঘুরতে আসা প্রবাসী কামরুজ্জামান টিটু বলেন, গ্রিন সিটি খ্যাত অফরায় অনেকেই ঘুরতে আসে, আমরাও এসেছি। আমাদের বাংলাদেশি ভাইয়েরা যে পরিশ্রম করে মরুর বুকে এত সুন্দর দেশি-বিদেশে নানা জাতের ফলমূল, শাক-সবজি উৎপাদন করছেন তা সত্যিই অসাধারণ।

এসএসএইচ