প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসী বাঙালিরা। 

কানাডার ক্যালগেরির বাংলাদেশ সেন্টারে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের বিরল সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে এ আহ্বান জানানো হয়।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বাতাসে লাশের গন্ধ, গণহত্যা, সাধারণ মানুষদের ওপর চালানো বর্বর অন্যায়-নির্যাতন, আগুনে পুড়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া গ্রামের পর গ্রাম, শ্রীলতাহানি, নিরীহদের ওপর চালানো বেয়নেটের আঘাত, প্রতিবেশীদের চিৎকার-আর্তনাদসহ বিভিন্ন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার সময় অনেকেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। 

বিদেশের মাটিতে প্রবাসীরা ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে গিয়েছিলেন একাত্তরের সেই রণাঙ্গনে। এছাড়াও অনাড়ম্বর এ অনুষ্ঠানে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চরমপত্র, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার অপেক্ষায় কিভাবে শক্তি সঞ্চার করে যুদ্ধ করেছিলেন তার বর্ণনা করেন।

বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও সত্তাকে তুলে ধরাই ছিল অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও এতে আলোচনা সভা, সম্মাননা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যালগেরির এবিএম কলেজ এবং আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল প্রবাস বাংলা ভয়েস। এর উপস্থাপনা করেন কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং বঙ্গবন্ধু'সহ সব শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়াও ৭১-এ রণাঙ্গনের যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি কয়েস চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রবাস বাংলা ভয়েস এর প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুল। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাধারণ সম্পাদক শুভ্র দাস শুভ্র। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইফাত জাহান চৈতি, তাসফিন হোসেন তপু এবং শুভ মজুমদার।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা'সহ আরও বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি কয়েস চৌধুরী, ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কাজী হাসান, আলবার্টা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী মো. কাদির, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল্লা রফিক, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সিলেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুপক দত্ত, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কিরন বনিক শংকর, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও আলবার্টা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যনথনি জ্যাকব, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইফাত জাহান চৈতি, তাসফিন হোসেন তপু এবং শুভ মজুমদার। এতে অংশগ্রহণ করেন গুরুপসাদ হোম চৌধুরী, প্রকৃতি দত্ত, প্রার্থনা দত্ত এবং চন্দ্রিমা পোদ্দার। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি অধ্যাপক, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. জেবুন্নেছা চপলা।

এ ডিসেম্বর মাসেই বাঙালি পেয়েছিল তার বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা, পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ে, দীর্ঘ নয় মাসের ত্যাগ তিতিক্ষার পর পৃথিবীর বুকে রচিত হয়েছিল অমর গাথা– বাঙালির স্বাধীনতা, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা। সেদিন এই পতাকাকে সমুন্নত রাখার জন্য যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন, তাদের অনেকেই আমাদের মাঝে নেই। যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রকৃত সম্মান দেখানোর মাধ্যমেই প্রবাসীরা যেন সমগ্র বাংলাদেশকে সম্মান দেখালেন।

এফকে