সংবাদ প্রকাশের জেরে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি রিপন আকন্দের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক, মিথ্যা চাঁদাবাজি ও আইসিটি আইনে মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে এ হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি জমির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কবির আল মাহমুদ।

তারা বলেন, আইসিটি আইনে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এগুলো উন্নত, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে নেই। এসব মামলার হাত থেকে দেশবরেণ্য সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এসব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেশের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

আরও পড়ুন>>মসজিদের টাকা আত্মসাৎ : অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা লক্ষ্য করেছি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সাংবাদিকরা যখন সোচ্চার, ঠিক তখনই একটি অসাধু চক্র নিজেদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধ ঢাকতে সাংবাদিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। ওই চক্রটির কর্মকাণ্ড সরকারের স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের নেতারা বলেন, স্বাধীন দেশে গণমাধ্যম কর্মীদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা বন্ধ না হলে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি সাংবাদিকরা এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হবে। অবিলম্বে ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি রিপন আকন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ নভেম্বর ‌‘ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। সংবাদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) সাধারণের দ্বিতীয় পর্যায়ের উপজেলাভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়নের রোস্তমের মোড়ে অবস্থিত নূরে রহমত জামে মসজিদের নামে বরাদ্দ হওয়া টিআর-এর ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে মসজিদ কমিটির হাতে মাত্র ১৪ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৪১ হাজার টাকা প্রকল্পের সভাপতি মহিলা সদস্যের স্বামী মাহবুর রহমান, ছয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান মোসাব্বির ভাগ–বাঁটোয়ারা করে নেন।

আরও পড়ুন>>ঢাকা পোস্ট সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলায় ১৩ সাংবাদিক সংগঠনের নিন্দা

এছাড়া ইউনিয়নের অপর একটি প্রকল্প জগৎরায় গোপালপুরের জাবালে রহমত জামে মসজিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৭ হাজার টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বির ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি আবুল হোসেনকে প্রকল্প সভাপতি বানিয়ে মসজিদে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৩২ হাজার টাকা একাই আত্মসাৎ করেন। মসজিদ সংস্কারের সরকারি অর্থ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাব্বিরের আত্মসাৎ করার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

সংবাদটির জের ধরে গত ৮ জানুয়ারি ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি রিপন আকন্দের নামে গাইবান্ধায় হয়রানিমূলক, মিথ্যা চাঁদাবাজি ও আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেন চেয়ারম্যান মোসাব্বির।

পরে চেয়ারম্যান মোসাব্বিরের বিরুদ্ধে দুটি মসজিদের নামে বরাদ্দ হওয়া সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন। গত ১৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান সিদ্দিককে প্রধান করে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুইজন সদস্য হলেন- সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফুল আলম এবং কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জুয়েল মিয়া।

কেএ/