লন্ডনে প্রখ্যাত লেখক ও কিংবদন্তী সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, গাফফার চৌধুরী বাংলা ভাষাকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এ কিংবদন্তী সাংবাদিক আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছেন।

পূর্ব লন্ডনের লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব অফিসে অনুষ্ঠিত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি সত্যবাণীর বার্তা সম্পাদক, সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক মুনিরা পারভীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীণ শীর্ষ সংগঠক, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গাফফার চৌধুরী তনয়া তনিমা চৌধুরী ও মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেইন। আবদুল গাফফার চৌধুরীর জীবনের শেষ লেখা গানের মাধ্যমে সংগীত পরিবেশন করেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, বিশিষ্ট গণসংগীত শিল্পী হিমাংশু গোস্বামী। কবিতা আবৃত্তি করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উর্মী মাজহার।

সঞ্চালক মুনিরা পারভিন বরাক উপত্যকার ভাষা শহীদদের কথা স্মরণ করে বলেন, আজ আসামের বরাক উপত্যকার ভাষা শহীদ দিবস। ১৯৬১ সালের এ দিনে বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পুলিশের গুলিতে বরাকের শিলচরে ১১ জন প্রাণ দিয়েছিলেন। সর্বপ্রথম যিনি প্রাণ দেন, তিনি ছিলেন কমলা ভট্টাচার্য। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ হিসেবে যিনি আজ ইতিহাসের অংশ। এ ১১ জন ভাষা শহীদের মধ্যে ১০ জনেরই জন্মস্থান বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে।

মুনিরা বলেন, ৫২র ২১ ফেব্রুয়ারি আর ৬১র ১৯ মে আমাদের চির অম্লান। আমরা বাঙালিরা পৃথিবীর বুকে মায়ের ভাষা রক্ষা করা সেই জাতি, যে জাতির গর্বিত সন্তানদের মধ্যে অন্যতম আবদুল গাফফার চৌধুরী। কাকতালীয় বিষয় হলো, যে গাফফার চৌধুরী ৫২র ভাষা শহীদদের স্মরণে কালজয়ী কবিতা লিখে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলে নিয়ে আজীবন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ছিলেন, সেই গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুও হলো আরেক ভাষা দিবস বরাক উপত্যকার ভাষা সৈনিকদের জীবন বিসর্জনের দিনে। আমার মনে হয়, একেই বলে ইতিহাসের কাকতাল। আজকের দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই আবদুল গাফফার চৌধুরীসহ বিশ্বের সব ভাষা শহীদদের প্রতি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সুলতান শরীফ গাফফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা বাংলা ভাষাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মানুষদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ রক্ষার জন্য কাজ করেছেন। তিনি আজীবন বেচে থাকবেন তার নিজস্ব কর্মগুণে।

বিশেষ অতিথি আবদুল গাফফার চৌধুরীর মেয়ে তনিমা চৌধুরী তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার বাবাকে প্রথম কাঁদতে দেখি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর। বাবা চিৎকার করে কেঁদেছেন। বাবার বিশ্বাসের জায়গাটা অটল ছিল। যা বিশ্বাস করতেন তাই লিখতেন। অন্যের বিশ্বাসে বা চিন্তায় প্রভাবিত হতেন না। একজন মানুষই তাকে প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের আরেক সংগঠক, ষাটের দশকের ছাত্রনেতা ও জে সি ডাব্লিউ আই-এর সাবেক চিফ অ্যাক্সিকিউটিভ হাবিব রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, বিবিসি বাংলার সাবেক সাংবাদিক উদয় শংকর দাস, সাপ্তাহিক জনমত-এর প্রধান সম্পাদক, সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা, লেখক সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী হুসনা মতিন, সাংবাদিক আ স ম মাসুম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাজিয়া বেগম, আমরা একাত্তর-এর যুক্তরাজ্য সংগঠক সত্যব্রত দাস স্বপন, চলচ্চিত্রকার মোস্তফা কামাল, লেখক মঈনুর রহমান বাবুল, মো. আব্দুল আজিজ, জামাল আহমেদ খান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম খান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, নির্মূল কমিটির শাহ বেলাল, শম্পা দেওয়ান নজরুল ইসলাম অকিব, মুজিবুল হক মনি, হিলাল সাইফ, শম্পা দেওয়ান, আব্দুল বাসির, নাজমা হুসেন ও সাংবাদিক রুমানা রাখি। পরে অমর একুশের গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা হয়।

এফকে