‘বিএনপির কর্মসূচি সরকারের গায়ে বাতাসও লাগাতে পারেনি’
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা। নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি তৎপরতার সঙ্গে বাড়ছে বিদেশি কূটনীতিকদের সংশ্লিষ্টতা।
নির্বাচন ঘিরে পশ্চিমা তৎপরতা পর্দার আড়াল থেকে ধীরে ধীরে যেমন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে তেমনি প্রবাসীদেরও আগ্রহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহ শেষে প্রবাসীদের বিভিন্ন বাড়ির দাওয়াত ও রেস্টুরেন্টগুলোতে চলছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলাপ-আলোচনা ও বিশ্লেষণ।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঢাকা পোস্টের কানাডা প্রতিনিধি আহসান রাজীব বুলবুলের সঙ্গে কথা হয় আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মেহেদী হাসান পায়েলের।
ঢাকা পোস্ট: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন মনে করেন?
বিজ্ঞাপন
মেহেদী হাসান পায়েল: দেশের প্রথমসারির মিডিয়াগুলোর হেডলাইন দেখলে মনে হবে বিশাল আন্দোলন চলছে! সরকার প্রচণ্ড চাপে আছে! আসলে কি তাই? বিএনপির ৮০ ভাগ আন্দোলন করে দিচ্ছে এই মিডিয়া! মিডিয়ার নিউজের সঙ্গে রাজপথের অবস্থার সিকি ভাগ মিল নেই। দুই একটা সমাবেশ করে সরকার পতন করবে পদযাত্রা পথ নাটক এসব করে এই দেশে সরকার পতন হয়?
‘আসলে সরকারের গায়ে এসব কর্মসূচি বাতাসও লাগাতে পারেনি। বিএনপির সব বল আসলে নো বল হয়েছে। আরও কিছু বিষয় খেয়াল করবেন বিএনপির সকল কর্মসূচি একক কর্মসূচি জোটগত কোনো কর্মসূচি নেই। এতে কি প্রমাণ হয় অর্থাৎ জোটের মধ্যে সমন্বয় নেই। জামায়াত ও আলাদা কর্মসূচি দেয় অর্থাৎ জোট নামমাত্র, আদতে কোনো জোট ফোট কিছুই নেই। এমন লেজেগোবরে অবস্থা বিএনপি আর তাদের জোটের। এরা সরকারকে কীভাবে বেকায়দায় ফেলবে? বেকায়দায় বিএনপি নিজেই আছে। বিএনপির মুমূর্ষু দলীয় প্রধান আর আরেকজন পলাতক এই নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা আছে সেটাই বড় প্রশ্ন।
ঢাকা পোস্ট: আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ সরকার এবং বিরোধীদলের অবস্থান কেমন?
মেহেদী হাসান পায়েল: আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কার পক্ষে বা বিপক্ষে বুঝতে হলে আগে বোঝা দরকার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কী? রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আগের এবং পরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা এবং ভিন্ন। বিশ্ব এখন স্পষ্টত দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে পশ্চিমা মিডিয়া যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করুক বাস্তবতা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ী মিত্র বাহিনী এখন প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জের মুখে তাদের প্রভাব এখন প্রায় অস্তমিত। যাই হোক সেটি ভিন্ন আলোচনা। আমরা আসলে একটি নব ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছি আর সেই ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশাল আলোচনার বিষয় কিন্তু সংক্ষেপেই বলার চেষ্টা করছি। দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠন 1. BRICS, 2. RCEP
শেখ হাসিনা সরকার এই দুটি সংগঠনে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা বুঝতেই পারছি না শেখ হাসিনা আসলে কী ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন! এই সিদ্ধান্তগুলো হবে জাতির অমর ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল মুক্তির ভাষণ আর শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক মুক্তির ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। শুধু এই দুটি সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে বাংলার ইতিহাসে অমর করে রাখবে। একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন দুটি বিষয় গবেষণা করার জন্য যুক্ত হবে শেখ হাসিনার রাজনীতির দর্শন এবং অর্থনীতির দর্শন। শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা আছে তিনি সময়ের আগে চলা শিখা অনির্বাণ। শেখ হাসিনার ভাবনাই হবে এক সময় গবেষণার বিষয় যে তিনি এত আগে কীভাবে এত বড় ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ব মোড়লদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অবিচলভাবে এই সিদ্ধান্তগুলোতে অটল ছিলেন!
BRICS & RCEP তে যোগদান হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ম্যাজিক মোমেন্ট। বিশ্ব পরিস্থিতি যদি বিশ্বযুদ্ধের দিকে না যায় বাংলাদেশ হবে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। বছর দুয়েক আগেও ভারতীয় মিডিয়াতে শেখ হাসিনা আর মমতা ব্যানার্জি তুলনা হত কিন্তু এখন তুলনা হয় মোদি এবং শেখ হাসিনাকে এশিয়ার যোগ্য নেতা অর্থাৎ শেখ হাসিনা এখন শুধু একজন সরকার প্রধান নয় এশিয়ার একজন অন্যতম নেতৃত্ব। বাংলার শিখা অনির্বাণ। বিএনপি নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কথা বলা আমার কাছে মনে হয় সময় নষ্ট করা।
ঢাকা পোস্ট: আপনি ঢাকা ৮ আসনে একজন আওয়ামী মনোয়নপ্রত্যাশী। কী সমস্যা রয়েছে এই অঞ্চলে এবং আপনার কাছে সমাধান কী?
মেহেদী হাসান পায়েল: স্মার্ট ঢাকা-৮ এটাই আমার মূল লক্ষ্য। আমাদের ঢাকা-৮ এর অনেক সমস্যার মধ্যে অন্যতম আমরা আমাদের জনপ্রতিনিধি জনসম্পৃক্ত হিসেবে পাই না। জনপ্রতিনিধির অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় কিন্তু তাদের আসার সময় নির্বাচনের পর আর তেমন হয়ে উঠে না। এছাড়া রাস্তা-ঘাট, মশা, বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদির যদিও এগুলো নগর ভবন বা মেয়রের দায়িত্ব বলে এমপিরা নিজেদের পিঠ বাঁচিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু অবশ্যই জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব ছিল নগর ভবনের। সাথে এই বিষয়গুলো সমন্বয় করা যা কোনো এমপি আগ্রহ বোধ করেন না। হয়ত ভাবেন সমাধান হলে মেয়র বা নগর ভবনের ক্রেডিট আমার কী লাভ। কিন্তু জনগণের সুবিধা সমস্যা লাঘবই হওয়া উচিত একজন এমপির লাভ।
যাই হোক আমি দায়িত্ব পেলে সরকারের যে কোনো সংস্থার সঙ্গে ঢাকা- ৮ এর সমস্যার জন্য যাবো। সমন্বয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। কার নাম হবে কে ক্রেডিট নেবে এটা আমার ভাবনার বিষয় না, বিষয় জনগণের সমস্যার সমাধান। আর আমি এই ঢাকা-৮ এর মাটি বাতাসে বেড়ে ওঠা কর্মী, এর প্রতিটি ধূলিকণা আমার চেনা এই মাটি গায়ে মেখেই আমার রাজনীতির পথচলা সুতরাং ঢাকা ৮ এর নাড়ির সাথেই আমার বন্ধন। স্মার্ট ঢাকা-৮ এটাই হবে আমার মূল লক্ষ্য।
ঢাকা পোস্ট: দলীয় বা স্থানীয় প্রার্থী ঢাকা-৮ এ নেই কেন?
মেহেদী হাসান পায়েল: জানি না আসলে এটা আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ব্যর্থতা বা অজ্ঞতা কিনা? আমি নিজেও এখনও এর উত্তর জানি না। আরও মজার বিষয় ঢাকা-৮ থেকে এখানকার স্থানীয় নেতারাও কেন যেন প্রার্থী হতে খুব একটা আগ্রহী হন না। যাই হোক একজন রাজপথের তৃণমূল কর্মী হিসেবে সংসদ প্রার্থী হওয়া নিজের দায়িত্ব মনে করেছি। বাকিটা দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
শাহজাহানপুর থেকে স্বাধীনতার পর (১৯৭১-২0২৩)) আজ পর্যন্ত আমার জানামতে কেউ আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন প্রার্থী হয়নি আমি প্রথম শাহজাহানপুর থেকে সংসদ নমিনেশন প্রার্থী।
ঢাকা পোস্ট: আপনি ঢাকা-৮ আসনের শাহজাহানপুর নিবাসী স্থানীয় এটি বিএনপি জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সেখান থেকে আওয়ামী রাজনীতি করা কতটুকু চ্যালেঞ্জিং?
মেহেদী হাসান পায়েল: আমার ছাত্র রাজনীতির শুরু এই শাহজাহানপুর থেকেই। তখন ছিল ৩৪নং ওয়ার্ড (বর্তমান ১১) ছাত্রলীগ কমিটি থেকেই ছাত্র রাজনীতির শুরু। তখন শাহজাহানপুরে জয় বাংলা বলার মানুষ তেমন ছিল না। মিছিলে লোক যেতে সাহস পেত না। তখন ঘরে ঘরে চায়ের স্টলে ঘুরে ঘুরে সবাইকে বুঝিয়ে মিছিলে লোক নিতাম। এজন্য বহু অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে।
এলাকার ছেলে হিসেবে সবাই আদর করতো, বিশ্বাস করতো। আজও সবার সেই বিশ্বাস আমার ওপর আছে এটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। জনগণের আস্থা ভালোবাসা যার জন্যই সংসদ নির্বাচন করার সাহস করতে পেরেছি। হুমকি ভয় আগেও ছিল এখনো আছে দীর্ঘ ২৪/২৫ বছর যাবৎ এগুলো মাথায় নিয়েই রাজনীতি করেছি। আর নতুন কী ভয় দেখাবে? বিএনপি জামায়াতের বুকের ওপর দিয়েই রাজনীতি করছি আগামীতেও করবো।
শাহজাহানপুর থেকে স্বাধীনতার পর (১৯৭১-২০২৩) আজ পর্যন্ত আমার জানামতে কেউ আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন প্রার্থী হয়নি। আমি প্রথম শাহজাহানপুর থেকে সংসদ নমিনেশন প্রার্থী হয়েছি। ভয় হুমকি এগুলো নিয়ে ভাবলে সংসদ প্রার্থী হওয়ার চিন্তা করতাম না।
ঢাকা পোস্ট: আপনি ছাত্রলীগ ও যুবলীগ রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত, সরকারের সুবিধা কতটুকু নিয়েছেন? যেহেতু দীর্ঘ সময় আপনাদের সরকার ক্ষমতায়? নিজেকে কতটুকু সৎ বলে দাবি করতে পারবেন?
মেহেদী হাসান পায়েল: আমার ছাত্র বা যুব রাজনীতির এই ২৫ বছরে কখনো কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করিনি বা কোনোদিন একটি টেন্ডার ফর্ম পর্যন্ত কিনিনি। চ্যালেঞ্জ করে বুকে হাত দিয়ে এই কথা বলতে পারি। সচ্ছল পরিবারের সন্তান। তিন বেলা খাওয়া পরার ক্ষমতা পরিবারের ছিল। তাই বিকল্প আয় বা রাজনীতি করে আয় করার চেষ্টা করতে হয়নি। বরং সব সময় দলীয় সহকর্মীদের যতদূর সম্ভব পাশে থাকার, সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।
আমার নিজস্ব ছোট একটি অলাভজনক সংগঠন রয়েছে, ‘মানুষ ফাউন্ডেশন’। এটার আমি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এলাকার অনগ্রসর যুব সমাজকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বিভিন্ন সেবা করাই আমাদের সংগঠনের লক্ষ্য। এটি প্রতিষ্ঠা করি ২৬ এপ্রিল ২০১৫ সালে। আমাদের সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে মুন্সিগঞ্জ এবং ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে। ফেসবুকে ‘মানুষ ফাউন্ডেশন’ পেজে আমাদের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত আপনারা দেখতে পাবেন।
ঢাকা পোস্ট: আপনার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা কী?
মেহেদী হাসান পায়েল: আমি আওয়ামী লীগের একজন তৃণমূল কর্মী। মুজিব আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশের জন্য শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে কাজ করা রাজনীতি করাই লক্ষ্য। তবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র যদি বলি যেহেতু বর্তমানে যুব রাজনীতির সাথেই সম্পৃক্ত সেক্ষেত্রে নগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে। যে কোনো অবস্থায় দলের জন্য শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে কাজ করে যাবো। শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াই আমার স্বপ্ন।
এমজে