করোনার প্রতিষেধক কতটা দ্রুত মানুষের হাতে পৌঁছাবে তার ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব অর্থনীতির গতি। এই বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েই জাতীয় বাজেট তৈরি করেছে কানাডা সরকার।

করোনাকালে কানাডার এই জাতীয় বাজেট আসলে জনগণের কাছ থেকে নেওয়ার নয়, তাদের দেয়ার বাজেট। কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’-এ জাতীয় বাজেট নিয়ে আলোচনায় বক্তারা এই মত প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সময় বুধবার (২৮ এপ্রিল) রাতে ‘পকেটে ডলার দেওয়ার বাজেট’ শীর্ষক এই আলোচনায় অটোয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ ড.শিশির শাহনওয়াজ, নিউব্রান্সউইক-সেইন্ট –জন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞানী ড. মুশতাক এম হোসাইন এবং ব্যাংকার, সাংস্কৃতিক সংগঠক সবিতা সোমানী অংশ নেন।

অটোয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ ড. শিশির শাহনওয়াজ বাজেটে নেওয়া বিভিন্ন সুরক্ষা জালের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, অর্থনীতি নিজ পায়ে শক্তভাবে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত মানুষকে সচল রাখতে হবে। সেজন্য এই বাজেটে সরকার ব্যক্তি পর্যায় থেকে ব্যবসা বাণিজ্য এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা নিয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার বাজেটকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বাজেটে করের ক্ষেত্রে কানাডা সরকার আসলে ভর্তুকি দিচ্ছে। কর বিভাগ কর ফাঁকি রোধ করার আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা নিয়েছে।

নিউব্রান্সউইক- সেইন্ট – জন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞানী ড. মুশতাক এম হোসাইন বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পকেটে যাতে কিছু যায় সেদিকে নজর রেখে এই বাজেট করা হয়েছে। অর্থনীতির ক্রান্তিকালে নাগরিকদের ভেন্টিলেশনের দরকার হয়। কিন্তু সেই ভেন্টিলেশন দীর্ঘায়িত হলে সমস্যা দেখা দেবে।

তিনি বলেন, আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে অর্থনীতি এক ধরনের স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। এমন ভাবনা থেকেই বাজেটে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে নাগরিকদের টিকার আওতায় নিয়ে আসা গেলে সরকারের এই পরিকল্পনা সফল হবে। টিকা বিলম্বিত হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরতে পারে।

ব্যাংকার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক সবিতা সোমানী তার আলোচনায় বলেন, বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে এই বাজেট দেওয়া হয়েছে বলে সরকার হয়ত স্বল্পমেয়াদে নাগরিকদের সুস্থ রাখা এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারকেই গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু জীবনযাত্রার মানের উৎকর্ষতার দিকে নজর দিতে পারেনি। সেটি হয়তো এই সময়ে সম্ভবও না।

তিনি বলেন, ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ারের ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য থাকা দরকার ছিল। মানসিক চিকিৎসার জন্য বাজেটে মোটা অংকের বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেগুলো ব্যয়ের পদ্ধতিটা ঠিক পরিষ্কার না।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেহেতু আমরা কানাডায় বসবাস করি, সরকারের নানা পদক্ষেপ, নীতিমালা নিয়ে আমাদের কথা বলা উচিত। বাজেট নিয়ে আমাদের মতামত সরকারকে পৌঁছে দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠন এবং মিডিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে।

এমএইচএস