কানাডার ভ্রমণ এবং পর্যটন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে করোনাভাইরাস মহামারি। চলমান পরিস্থিতি এ খাত থেকে দেশটির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয়কে ব্যাহত করেছে। এ খাতের কয়েক হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এতে কানাডার সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। 
 
কানাডায় বছরের প্রায় আট মাসই বরফে আচ্ছাদিত থাকে। গ্রীষ্মের এ সময়ে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে দেশটি। কিন্তু গত বছর থেকে চিত্র পুরোপুরিই ভিন্ন। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব আর সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) প্রকাশিত বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রভাব প্রতিবেদন বলছে, পর্যটন শিল্পের পতনে গত বছর কানাডা ৫৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ প্রভাবে জিডিপির ৫৩ শতাংশ কমেছে। 

পর্যটন শিল্পে ক্ষতি কানাডার বাসিন্দাদের জীবিকাতেও প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে এই খাতের ৩ লাখ ৭৩ হাজার কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। ২০১৯ সালে এ খাতে কর্মসংস্থান ছিল ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন। ২০২০ সালে তা নেমেছে ১ দশমিক ৪ মিলিয়নে।

কানাডার লিবারেল সরকারের মজুরি ভর্তুকি কর্মসূচি না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। ডব্লিউটিটিসি বলছে এ খাতের শ্রমিকরা এখনও ঝুঁকিতে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দ্রুত চালু করা না করা হলে আরও অনেকে চাকরি হারাতে পারেন। 

অন্যদিকে টয়োটা কানাডার লেজার বিপণন পরিচালিত একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, ভ্রমণপিপাসু কানাডিয়ানরা ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত। এ বছরই ছুটিতে তারা ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন।

বিশিষ্ট কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা শুধুমাত্র জীবন-জীবিকাকে বিপর্যয়ের মুখোমুখি করেছে তা নয়, যোগাযোগের বিচ্ছিন্নতায় সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক বিপর্যয়ও। বহুজাতিক সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ কানাডার অধিবাসীদের অনেকে অবকাশ বা নানা প্রয়োজনে নিজ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন। কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধের কারণে তারা তা করতে পারছেন না। এতে একদিকে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের মানসিক সুস্থতায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। 

বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কিরণ বনিক শংকর বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার এ সময়ে বেঁচে থাকাটাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার-পরিজন নিয়ে আবার ভ্রমণে বের হব। সুদিন ফিরে আসবে-এ  প্রত্যাশায় আমরা দিন গুনছি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি অব্যাহত করোনার টিকাদানের গতি আরও বাড়িয়ে তোলা হয়, গ্রীষ্মের আগে আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা হয়, সুস্পষ্ট রোডম্যাপ এবং ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, তাহলেই চাকরি আবারও ফিরে পেতে পারেন ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের চাকরিহারারা।
 
আরএইচ